নতুন ভেন্যুতে নতুন কিছুর আশা

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আজ মাঠে নামবে টাইগাররা

নজরুল ইসলাম, মুম্বাই থেকে | মঙ্গলবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

আরব সাগরের কূল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে দারুণ স্থাপত্য শৈলির মুম্বাই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। এমনিতেই দারুণ সুন্দর স্টেডিয়ামটি বিশ্বকাপের জন্য সেজেছে আরো দারুণ সাজে। কারণ এই স্টেডিয়ামেই হবে একটি সেমিফাইনাল সহ পাঁচটি ম্যাচ। আর সে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। এবারের বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের তিনজন ছাড়া বাকিরা প্রথমবার এসেছে এই স্টেডিয়ামে। যদিও ১৯৯০ সালে একবার এই স্টেডিয়ামে একটি ম্যাচ খেলেছিল আকরাম খানরা। কিন্তু সেটি মোটেও সুখকর ছিল না টাইগারদের জন্য। সাকিব, মোস্তাফিজ এবং লিটন আইপিএলের কল্যাণে এই স্টেডিয়ামে আসার সুযোগ পেয়েছে।

বাকিরা এসেছে প্রথমবারের মতো। আর তাই প্রথমবারের মতো এই ওয়াংখেড়েতে আসাটা স্মরণীয় করে রাখতে চাইবে নিশ্চয়ই বাংলাদেশ দল। কিন্তু সে কাজটা কতোটা কঠিন তা নিশ্চয়ই বলে বুঝানোর কোন দরকার নেই। কারণ জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা বাংলাদেশ এরই মধ্যে হেরে বসেছে তিনটি ম্যাচ। যদিও এই তিনিট ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল বিশ্বকাপের সবচাইতে সেরা তিনটি দল যথাক্রমে ভারত, ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড। আজ ওয়াংখেড়েতে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। যেখানে টাইগারদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। যে দলটি এবার বিশ্বকাপে এক রকম উড়ছে। এইতো দুই দিন আগে এই মাঠেই ইংল্যান্ডকে একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে। তাই আজকের ম্যাচটা যেন বাংলাদেশের জন্য ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে ঝাপ দেওয়ার মতো অবস্থা।

এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই দুর্দান্ত দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও চাঁদের কলংকের মতো নেদারল্যান্ডসের মত দলের কাছে হেরে কিছুটা কালিমা লেপন করেছিল নিজেদের গায়ে। তবে পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে লজ্জায় ডুবিয়ে সে কালিমা যেন মুছে দিল প্রোটিয়ারা নিজেরাই। এবারের বিশ্বকাপের এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের দুটি ইনিংস খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলংকার বিপক্ষে গত ৭ অক্টোবর ৪২৮ রান করার পর গত ২১ অক্টোবর মুম্বাইতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯৯ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দলটির ব্যাটাররা রয়েছে দারুণ ছন্দে। রানের ফুলঝুড়ি ছুটাচ্ছেন ব্যাটাররা। আর বোলাররাতো বল হাতে আগুনই ঝরাচ্ছেন। কাজেই এমন একটি দলের বিপক্ষে একটি জয়ের নেশায় আজ মাঠে নামছে টাইগাররা। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ব্যাটার এবং বোলাররা যেন দক্ষিণ আফ্রিকার ঠিক বিপরীতে হাঁটছে। এবারের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ২৫৬। যা পুনেতে ভারতের বিপক্ষে করেছিল বাংলাদেশ। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে কেমন খেলবে টাইগাররা। একটি জয়ের জন্য তীথ্যের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশ অবশ্য নামতে চান নতুন উদ্যমে নতুন মিশনে।

এবারের বিশ্বকাপে ভারতের অন্যান্য স্টেডিয়াম গুলোর উইকেটের মতো মুম্বাইতেও যে রানের বন্যা বইয়ে যাবে তার প্রমাণ মিলেছে প্রথম ম্যাচেই। যদিও এই উইকেটে বোলাররাও নিজেদের সেরাটা দেওয়ার সুযোগ পাবে। বিশেষ করে পেসাররা এখানে সুবিধাটা বেশি পাবে। আর এমনিতেই এবারের বিশ্বকাপটা যেন ব্যাটার এবং পেসারদের হতে চলেছে। তবে বাংলাদেশ দল এই দুই বিভাগেই অনেকটাই পিছিয়ে অন্যান্য দল সমূহের চাইতে। আগের তিন ম্যাচে টানা হারের দখল কাটিয়ে জয়ে ফেরার প্রত্যয় বাংলাদেশের। কিন্তু সে কাজটা মোটেও সহজ হবে না সাকিবদের। তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে ইনজুরির কারণে আগের ম্যাচে খেলতে না পারা সাকিব হয়তো ফিরবেন এই ম্যাচে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা যে ব্যাটিং করছে তা যেকোন দলের বোলারদের জন্য ভয়ংকর। এরই মধ্যে দলটির চারজন ব্যাটার মিলে করেছেন পাঁচটি সেঞ্চুরি। যেখানে কুইন্টন ডি কক একাই করেছেন দুটি সেঞ্চুরি। আর বল হাতে এনগিডি, রাবাদা, মাহারেজ কিংবা কুয়েটজি, জেনসেনরা চুরমার করে দিতে পারে যেকোন দলের ব্যাটিংকে।

তবে বাংলাদেশের এখন যে অবস্থা তাতে সে সব নিয়ে ভাবার সময় আর সুযোগ কোনটাই নেই। কারণ হারতে হারতে এক রকম পিট দেওয়ালে ঠেকে গেছে বাংলাদেশ দলের। তাই এখন কেবলই সামনের দিকে যাওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নেই টাইগারদের। এখন একমাত্র মরণ কামড় দিতে হবে। আর সে মরণ কামড় দিতে যেন প্রস্তুত বাংলাদেশ। যার হারানোর কিছু নেই তারতো যা আছে সবই পাওয়ার। দক্ষিণ আফ্রিকা যেন এবারের বিশ্বকাপে কোন পরিসংখ্যানই মানছে না। একের পর এক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েই যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশের পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে প্রোটিয়াসরা। তাই আজ যেমন লিটন, শান্ত, হৃদয়, মুশফিক, সাকিবদের পরীক্ষা দিতে হবে রাবাদা, এনগিডি, মহারেজদের সামনে তেমনি সাকিব, তাসকিন, মোস্তাফিজ, মিরাজ, নাসুমদের পরীক্ষা নেবে ডি কক, হেন্ডরিক, দুশান, মার্কলাম, মিলাররা। তবে বাংলাদেশের স্পিনের বিপক্ষে বরাবরই দুর্বল প্রোটিয়ারা অন্তত সেদিক থেকেই পিছিয়ে। আর সে সুযোগটা নিতেই যেন মুখিয়ে আছে সাকিবের দল। বাংলাদেশ দলের সামনে লক্ষ্য বলতে একটাই। আর তা হচ্ছে সামনের ম্যাচ গুলো জেতা। কোন পরিসংখ্যান কিংবা অন্য কোন কিছুর দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু আগের ম্যাচ গুলোতে বাংলাদেশ দল নিজেদের পরিকল্পনা মতো খেলতে পারেনি বা পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেনি, তাই এখন নতুন করেই যেন ভাবতে হচ্ছে টাইগার শিবিরকে। তাই এখন জয় ছাড়া অন্তত আর কিছু ভাবছে না বাংলাদেশ। অন্তত টানা চার ম্যাচে হারতে চাইবে না সাকিবের দল। আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে ম্যাচটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাকিস্তানকে উড়িয়ে আফগানিস্তানের রেকর্ড গড়া জয়
পরবর্তী নিবন্ধসাত ঘণ্টা পর ভৈরবে ট্রেন চলাচল শুরু