পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে আশাতীতভাবে। কিন্তু কমে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। দৈনিক আজাদীতে ২১ অক্টোবর প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি সাড়ে ৫ হাজার কোটির বেশি টাকা কমে গেছে। একদিকে আনন্দের সংবাদ, অন্যদিকে উদ্বেগের। তৈরি পোশাকের বড় বাজার ইউরোপীয় দেশ, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের সর্ববৃহৎ বাজার আমেরিকায় রপ্তানি কমে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে খবরে। আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস। দেশ হিসেবে আমেরিকাই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। দেশের গার্মেন্টস সেক্টরের ভালো–মন্দের অনেক কিছুই আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল। আমেরিকা বছরে প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক কিনে বাংলাদেশ থেকে। বিশাল এই বাজারে পণ্য রপ্তানি কমছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন কোয়ার্টারে আমেরিকায় মোট ৪ হাজার ৫৭৭ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন কোয়ার্টারে রপ্তানি হয় ৪ হাজার ১০৬ দশমিক ১৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে ৪৭১ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানির ২৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ রপ্তানি হয়েছিল আমেরিকায়। চলতি বছরে তা কমে নেমে আসে ২৬.০৪ শতাংশে। পোশাক রপ্তানি এভাবে কমে যাওয়া গার্মেন্টস কারখানার মালিকদের শঙ্কিত করেছে। তাঁরা বলছেন, দিন দিন পণ্যের চাহিদা বাড়ে। পুরো পৃথিবীতে পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। আমাদের রপ্তানিও বেড়েছে। কিন্তু আমেরিকায় কমে যাওয়া শুভ লক্ষণ নয়।
তবে আমেরিকায় রপ্তানি কমলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বছরের প্রথম তিন কোয়ার্টারে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে। গত বছরের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশ মোট ১৫ হাজার ২৮৪ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল। চলতি বছর যা ১৫ হাজার ৭৭১ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রপ্তানি বেড়েছে ৪৮৬ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার। টাকার অংকে যা প্রায় পৌনে ৬ হাজার কোটি টাকা।
বলা অনাবশ্যক যে, আশির দশকে শুরু হওয়া বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছে। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ বিশ্বের নানা দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের প্রধান গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ রয়েছে। এসব দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত সিংহভাগ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। উপরোক্ত দেশগুলোই মূলত তৈরি পোশাকের বাজার। শুরু থেকে এসব দেশে বাংলাদেশ গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করে আসছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমলেও সার্বিকভাবে বেড়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল ১৪.৯৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত উপরোক্ত ২৭ দেশে রপ্তানি হয়েছে ১৫.৮৬ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি ৫.৯৬ শতাংশ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের আধিপত্য বাড়ছে। ২০২২ সালে তৈরি পোশাক মার্কেটের ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে ছিল, আগের বছর যা ছিল ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এই সময়ে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ৫৭৬ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক বিক্রি হয়েছে। বরাবরের মতো এই বিশাল মার্কেটের সিংহভাগ চীনের দখলে। আলোচ্য সময়ে চীন ১৮২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা মোট বাজারের ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অবশ্য ২০২১ সালের তুলনায় চীনের মার্কেট শেয়ার কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকায় রপ্তানি শুধু যে বাংলাদেশ থেকে কমেছে তা নয়। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রপ্তানিকারক দেশগুলোর রপ্তানি আমাদের তুলনায় আরো বেশি কমেছে। তাঁরা সহসা এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তাঁরা নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।