আগামী বছর মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে কতগুলো ক্লাস, কোন বিষয়ে কত নম্বরে অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন কীভাবে হবে তা তুলে ধরেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড–এনসিটিবি। গতকাল শনিবার এনসিটিবির ওয়েবসাইটে বিষয় কাঠামো, নম্বর ও মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রকাশের তথ্য দিয়েছেন এনসিটিবির সচিব শাহ্ মুহাম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌস।
ষষ্ঠ–অষ্টম শ্রেণি : এনসিটিবির বিষয় কাঠামো অনুসারে, আগামী বছর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দশটি বিষয়ে পড়ানো হবে। এর মধ্যে নয়টি আবশ্যিক ও একটি থাকবে ঐচ্ছিক বিষয়। আবশ্যিক নয়টি বিষয়ের অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষায় মূল্যায়ন হবে লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে। আর ঐচ্ছিক বিষয়ে হবে শ্রেণি কাজ, অনুসন্ধান, প্রজেক্ট, অ্যাসাইনমেন্ট ও শ্রেণি অভীক্ষার সমন্বয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন।
অর্ধবার্ষিকী ও বার্ষিক পরীক্ষায় আবশ্যিক বিষয়গুলোর মধ্যে বাংলা প্রথম পত্রে ১০০, দ্বিতীয় পত্রে ৫০; ইংরেজি প্রথম পত্রে ১০০, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে ৫০; গণিতে ১০০, বিজ্ঞানে ১০০, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ১০০, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ৫০ ও ধর্মে ১০০ নম্বর থাকবে। খবর বিডিনিউজের।
আরবি, সংস্কৃত, পালি, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্যবিজ্ঞান, চারু ও কারুকলা ও সংগীতের যেকোনো একটি ঐচ্ছিক বিষয় পড়তে হবে। এ বিষয়গুলোর অর্ধবার্ষিকী ও বার্ষিক পরীক্ষা হবে ৫০ নম্বরে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতি সপ্তাহে ৩০টি পিরিয়ড বা ক্লাস হবে। এর মধ্যে বাংলা প্রথম পত্রে তিনটি, বাংলা দ্বিতীয় পত্রে দুইটি, ইংরেজি প্রথম পত্রে চারটি, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে দুইটি, গণিতে পাঁচটি, বিজ্ঞানে পাঁচটি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে তিনটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দুইটি, ধর্মে তিনটি ও ঐচ্ছিক বিষয়ের একটি পিরিয়ড হবে প্রতি সপ্তাহে।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন ছয়টি ক্লাস হবে। এক শিফটের স্কুলগুলোতে প্রথম ক্লাস হবে ৬০ মিনিট ও পরের ক্লাসগুলো হবে ৫০ মিনিটের। স্কুলে প্রতিদিনের প্রারম্ভিক সমাবেশ হবে ১৫ মিনিট আর টিফিন বিরতি হবে ৫০ মিনিট। এক শিফটের স্কুলের মোট সময় হবে ৬ ঘণ্টা। অপরদিকে দুই শিফটের স্কুলে এসব শ্রেণিতে প্রথম ক্লাস হবে ৪৫ মিনিটের আর অন্যান্য ক্লাস হবে ৪০ মিনিটের। প্রারম্ভিক সমাবেশ হবে ১০ মিনিট আর টিফিনের বিরতি থাকবে ১৫ মিনিট। দুই শিফটের স্কুলের প্রতি শিফটের মোট সময় হবে ৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
নবম–দশম শ্রেণি : আগামী বছর নবম ও দশম শ্রেণিতে নয়টি আবশ্যিক বিষয়, বিভাগভিত্তিক চারটি বিষয় ও একটি ঐচ্ছিক বিষয় পড়ানো হবে। অর্ধবার্ষিকী ও বার্ষিক পরীক্ষায় নবম ও দশম শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে বাংলা প্রথম পত্রে ১০০, দ্বিতীয় পত্রে ১০০; ইংরেজি প্রথম পত্রে ১০০, দ্বিতীয় পত্রে ১০০; গণিতে ১০০, ধর্মে ১০০, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ৫০ ক্যারিয়ার শিক্ষায় ৫০, শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলায় ৫০ নম্বর থাকবে।
এ দুই শ্রেণির অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থবিজ্ঞানে ১০০, রসায়নে ১০০, জীববিজ্ঞান বা উচ্চতর গণিতে ১০০, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে ১০০ নম্বর থাকবে।
নবম ও দশম শ্রেণির মানবিক শাখায় দুই পরীক্ষায় বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতায় ১০০, ভূগোল ও পরিবেশে ১০০, অর্থনীতি বা পৌরনীতি ও নাগরিকতা ১০০, বিজ্ঞানে ১০০ নম্বর থাকবে। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের নবম ও দশম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষায় ব্যবসায় উদ্যোগে ১০০, হিসাববিজ্ঞানে ১০০, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ে ১০০ এবং বিজ্ঞানে ১০০ নম্বর থাকবে।
জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত, ভূগোল ও পরিবেশ, কৃষিশিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, চারু ও কারুকলা ও সংগীতের যেকোন একটি বিষয়ে ঐচ্ছিক বা চতুর্থ বিষয়ে অর্ধবার্ষিক বা বার্ষিক পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরে। অন্যান্য বিষয়গুলোতে লিখিত ও সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হলেও ক্যারিয়ার শিক্ষা এবং শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলায় বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।
নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতি সপ্তাহে ৩৫টি পিরিয়ড বা ক্লাস হবে। প্রতি সপ্তাহে বাংলা প্রথম পত্রে তিনটি, বাংলা দ্বিতীয় পত্রে দুটি, ইংরেজি প্রথম পত্রে চারটি, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে দুইটি, গণিতে পাঁচটি, ধর্মে দুইটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে একটি এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা বিষয়ে একটি ক্লাস হবে। এ ছাড়া বিভাগ ভিত্তিক বিষয়গুলোতে ও ঐচ্ছিক বিষয়ে সপ্তাহে তিনটি করে ক্লাস হবে।
এক শিফটের স্কুলে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রথম ক্লাস হবে ৬০ মিনিট ও পরবর্তী ক্লাসগুলো হবে ৫০ মিনিটের। এক শিফটের স্কুলে প্রতিদিনের সমাবেশ হবে ১৫ মিনিট ও টিফিন বিরতি হবে ৩৫ মিনিট। মোট সময় হবে ৬ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। দুই শিফটের স্কুলে নবম ও দশম শ্রেণির প্রথম ক্লাস হবে ৪৫ মিনিট ও পরবর্তী ক্লাসগুলো হবে ৪০ মিনিট। প্রারম্ভিক সমাবেশ হবে ১০ মিনিট ও টিফিন বিরতি হবে ১৫ মিনিট। মোট সময় হবে ৫ ঘণ্টা ১০ মিনিট।
ধারাবাহিক মূল্যায়ন : মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ঐচ্ছিক বিষয়ে শ্রেণির কাজে ২০, অনুসন্ধানমূলক কাজ, প্রজেক্ট ও অ্যাসাইনমেন্ট ১০, শ্রেণি অভীক্ষায় ২০ নম্বর থাকবে।
শ্রেণি কাজের অন্তর্ভুক্ত হবে প্রশ্নের উত্তর লেখা, মৌখিক উপস্থাপনা, ছবি, চিত্র, সারণি, মানচিত্র, লেখাচিত্র আঁকা, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ভূমিকাভিনয়, ব্যবহারিক কাজ ও আরবি, সংস্কৃত ও পালি বিষয়ের জন্য শোনা, বলা, পড়া ও লেখা ইত্যাদি।
শিক্ষার্থীদের চিন্তন দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে এমন হাতে কলমে কাজ, ব্যবহারিক কাজ, প্রজেক্ট তৈরি, মডেল তৈরি, অ্যাসাইনমেন্ট, সীমিত পরিসরে অনুসন্ধানমূলক কাজ ও প্রতিবেদন প্রণয়ন ও উপস্থাপনা দেওয়া যাবে।
শ্রেণি অভীক্ষা হবে লিখিত ও ব্যবহারিক কাজে। লিখিত অংশের জন্য নির্বাচনধর্মী বা সরবরাহকর্মীর কাজ থাকতে পারে। এ অংশে বহুনির্বাচনি প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর, রচনামূলক প্রশ্ন থাকবে। শ্রেণি অভীক্ষা এক পিরিয়ড সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। শ্রেণি অভীক্ষা নেওয়ার দিন অন্যান্য পিরিয়ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম যথারীতি চলবে।
ধারাবাহিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষার্থীর রিপোর্ট কার্ডে প্রদর্শন করতে হবে। তবে শিক্ষার্থীর ফলাফল ও গ্রেড নির্ধারণে ধারাবাহিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর অন্তর্ভুক্ত হবে না।
বাড়ানো যাবে উচ্চতর গণিতের ক্লাস : এনসিটিবি বলছে, প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংখ্যা ও ভৌত অবকাঠামো বিবেচনা করে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান উচ্চতর গণিতের ক্লাস বা পিরিয়ড সংখ্যা বাড়াতে পারবে। আর ইংরেজি, গণিত, উচ্চতর গণিত, বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর ক্লাস রুটিনে টিফিন বিরতির আগে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয় বিবেচনা করতে বলেছে এনসিটিবি।