দুয়ারে নতুন বছর, গগনে ভাতিছে নবারুন রেখা। নবপ্রভাতে নবজীবনের গান গেয়ে বিশ্ব বরণ করে নিল ইংরেজি নববর্ষ ২০২৩। বিগত দিনের যত সফলতা তার প্রেরণা থেকে সঞ্চারিত শক্তি আর বিফলতার শিক্ষাকে অভিজ্ঞতায় নিয়ে এগিয়ে চলার দৃঢ় সংকল্পে নবযাত্রা শুভ হোক। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সকলকে জানাই ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা। নতুন বছরটি হবে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের ও সম্ভাবনার। এ বছরই আমরা চট্টগ্রামবাসী পেতে চলেছি বেশ কিছু কাজের চূড়ান্ত রূপ। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সুড়ঙ্গ সড়কে যান চলাচল উন্মুক্ত হবে অচিরেই। বিমান বন্দর হতে লালখান বাজার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আংশিক (বিমান বন্দর হতে নিমতলা পর্যন্ত) চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ বছরটিতেই। চট্টলদরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য শতভাগ জিওবি তহবিল থেকে ২ হাজার ৪শ ৯১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছেন বিগত বছরেই। চট্টগ্রাম মহানগরের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। এ প্রকল্পের অধীনে ৭৬৯ কিলোমিটার
সড়কের উন্নয়ন, ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ, একটি ওভারপাস, ১৪টি ব্রিজ, ২২টি কালভার্ট, ১০টি গোলচত্বর নির্মাণ করা হবে। যার অন্তত ৫০ ভাগ কাজ ২০২৩ সালে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ সমাপ্ত করা হবে। ২০২০ সালে বিশ্ব মুখোমুখি হয়েছিল করোনা ভাইরাসের। এর থাবায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল অনেকটাই। বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারায় কিছুটা ছেদ পড়ে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে অধিষ্ঠিত হই। রুটিন কাজের পাশাপাশি কোভিড–১৯ এর সাথে যুদ্ধ করে আমার দায়িত্ব পালন চলে। আল্লাহর অশেষ রহমত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনা ও দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বহুলাংশে কম ক্ষতির সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ। কৃষি, শিল্প ও নানাখাতে নানামুখী প্রণোদনায় আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি। এমন সময়ে আবারো বিশ্ব অর্থনীতিতে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয় রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর নিষেধাজ্ঞা–পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে আবারো বিশ্ব অর্থনীতি। স্বভাবতই বাংলাদেশেও পড়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বারবার বলা সত্ত্বেও বলতে হয়, আমাদের আছেন একজন শেখ হাসিনা। যিনি জাতির জনকের কন্যা, জাতির ভবিষ্যত নির্মাণের প্রধান স্থপতি, আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক ও জনদরদী এবং আমাদের প্রিয় মাতৃকা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
বৈশ্বিক অর্থনীতির এ মন্দার মধ্যেও দেশের উন্নয়ন কাজে এতটুকু ছেদ পড়তে দেননি তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল স্থাপত্য কলায় নির্মিত পদ্মাসেতুর মত বিশাল চ্যালেঞ্জিং প্রকল্পের কাজ সুসম্পন্ন করে বিগত বছরে উদ্বোধন করার পাশাপাশি একসাথে শত সেতুর উদ্বোধন করা হয়। বছর শুরুর প্রাক্কালে যানজটের ঢাকা শহরের বুকে চালু করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এলিভেটেড মেট্রোরেল। সবগুলো স্টেশন চালু হয়ে এ বছরেই মেট্রোরেলের পূর্ণ সুবিধা পাবে রাজধানীর মানুষ।
২০২৩ সাল আরো একটি কারণে আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই, ২০২৩ সালটা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়। উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে নানা অপপ্রচার, ষড়যন্ত্র ও নাশকতার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে একটি চক্র। তারা যাতে এ বছরটাতে ষড়যন্ত্রের পথে অপতৎপরতা বাড়াতে না পারে সেজন্য আমাদেরকে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। সবকিছু সামাল দিয়েই সফলতার সাথে এগিয়ে যাব আমরা– এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সবাইকে আবারো ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা।
লেখক : মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন