চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, বিজয়ের যে ইতিহাস, সেই ইতিহাসকে বিভিন্নভাবে বিকৃত করা হয়েছে। আমরা দেখেছি, গত ১৬ বছর ইতিহাস কিভাবে বিকৃত হয়েছে। ৭১র মুক্তিযুদ্ধে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা করার কথা ছিল না। ‘আই রিভোল্ট বা উই রিভোল্ট’ বলে মুক্তিযুদ্ধের ২৫ মার্চের কালো রাতে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করার কথা ছিল না, স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল না। কেননা, সে সময় তো বিএনপি ক্ষমতায় ছিল না। ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। তারা ১৯৭০ সালে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছিল। তারা কেন সেদিন নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে? কি কারণে ব্যর্থ হয়েছে, এই ইতিহাসগুলো আমাদের জানতে হবে। এসব না জানলে সব সময় ইতিহাস বিকৃত হতে থাকবে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে।
তিনি সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর পাঁচলাইশ নয়াহাটস্থ সিটি করপোরেশন বালিকা বিদ্যালয় মাঠে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদ আয়োজিত বিজয় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পাঁচলাইশ ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজী মো. ইলিয়াছের সভাপতিত্বে ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম আবুল কালাম আবুর পরিচালনায় এতে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও চট্টগ্রাম ৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী আলহাজ্ব আবু সুফিয়ান।
এসময় ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আল্লাহর অসীম রহমত এবং আপনাদের দোয়ায় আমি চসিকের মেয়র হয়েছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি আপনাদের বলেছি, মেয়র হিসেবে নয় আপনাদের সেবক হয়ে কাজ করতে এসেছি। সেই লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস আমি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে ওই ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল, সেই বধ্যভূমির প্রকৃত ইতিহাস আমি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। ওই বিপ্লব উদ্যান, যে উদ্যান থেকে ২৫ মার্চের কালো রাতে শহীদ জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘আই রিভোল্ট’। সেই ২৫ মার্চের কালো রাত্রিকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকে ধারণ করে, ওই বিপ্লব উদ্যানে সূচনা কথাগুলো লিখে রাখতে চাই। সেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি জড়িত আছে।
গত ৫ আগস্ট বঙ্গভবনের চিত্র তুলে ধরে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আল্লাহর অসীম রহমত ছিল শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছিলেন, না হয় অন্য অবস্থা হতো। এই যে পালিয়ে যাওয়ার, লুকিয়ে যাওয়ার, আত্মগোপনে যাওয়া দুঃসময়ে, সেটা একমাত্র আওয়ামী লীগই করেছে। কিন্তু বিএনপির রাজনীতি, শহীদ জিয়ার রাজনীতি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি, তারেক রহমানের রাজনীতি সেখানেই, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যেখানে ক্রাইসিস যেখানে দুঃসময়। আর সেখানেই (দুঃসময়) শহীদ জিয়া নেতৃত্ব দিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দিয়েছেন, বর্তমানে তারেক রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে আবুল হাশেম বক্কর বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিদ্রোহ চট্টগ্রাম থেকেই হয়েছে। তাই চট্টগ্রামের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধপূর্ব এবং যুদ্ধকালীন সময়ে অবিস্মরনীয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নীরব ছিলেন না। এদেশের সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করে তিনি পাক সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছেন চট্টগ্রাম থেকেই। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবার অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়ার অবদান মানুষের হৃদয়ে।
বিশেষ অতিথি আবু সুফিয়ান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার পরের সরকারের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে দেশকে বের করে নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আওয়ামী লীগের তলা বিহীন জুড়ি থেকে দেশকে স্বনির্ভর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শহীদ জিয়ার অবদান এদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক জি এম আইয়ুব খান, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী, বায়েজিদ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের জসিম, বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফুর রহমান, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য আব্দুর রহিম, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ব্যাংকার গিয়াস উদ্দিন বাদল, পাঁচলাই তরুণ মেলা ক্লাবের সভাপতি ও বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী জসিম। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।