শেষ হচ্ছে প্রতীক্ষার প্রহর। শুরু হচ্ছে মুজিববর্ষ ফুটবল টুর্নামেন্ট। আজই রচিত হতে যাচ্ছে নতুন ইতিহাস। সারা দেশে করোনার কারণে অন্যান্য খেলাধুলা যেখানে বন্ধ, ঠিক তখনই ফুটবল নিয়ে মাঠে নামছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন যেখানে এমন আয়োজন করার সাহস করছে না, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টুর্নামেন্ট চালানোর মত কঠিন দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তাদের এই কঠিন মিশনের সূচনা হচ্ছে আজ সন্ধ্যায়। ফ্লাড লাইটের আলোয় শুধু একটি টুর্নামেন্ট নয়, আজ যেন উদ্ভাসিত হতে যাচ্ছে দেশের ফুটবল অঙ্গন। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আজ সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি। উদ্বোধনী দিনে মাঠে নামবে আবু তাহের পুতু একাদশ এবং রফিক আহমেদ চৌধুরী একাদশ।
আগেই জানানো হয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রয়াত চার সাধারণ সম্পাদকের নামে চারটি দল নিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে এই টুর্নামেন্টের। বাকি দুটি দলের নাম এস এম কামাল উদ্দিন একাদশ এবং ডা. কামাল এ খান একাদশ। এই দুটি দল মাঠে নামবে আগামীকাল। এরই মধ্যে টুর্নামেন্টের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের মাঠকে গড়ে তোলা হয়েছে একেবারে ফুটবল উপযোগী করে। স্টেডিয়ামের মাঠ যেন এখন সবুজ গালিচা। ঠিক ২০৫ দিন পর আবার এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কোনো ফুটবল ম্যাচ। সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লীগের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই মাঠে। তবে এবার একেবারে নতুন আবহে, নতুন নিয়মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফুটবল ম্যাচ। এবার দর্শক বিহীন গ্যালারি, নানা শর্ত আর নিয়ম, মুখে মাস্ক, হাতে স্যানিটাইজার- সব মিলে এ যেন অন্য এক ফুটবল ম্যাচ। টান টান উত্তেজনার ফুটবল ম্যাচ যেন এখন খাঁচায় বন্দী কোনো অপরিচিক একটি খেলা। আর নতুন নিয়মে ফুটবলের যাত্রাটা আজ শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে।
এবারের টুর্নামেন্টটি আরো একাধিক কারণে নতুন এক ইতিহাস হয়ে থাকবে। কারণ, জাতীয় দল বা দেশের শীর্ষ লীগে খেলা চট্টগ্রামের ফুটবলাররা বলতে গেলে খেলতেই পারেননি নিজেদের মাঠ চট্টগ্রামে। নানা নিয়মের বেড়াজালে আটকে থাকতে হয়েছিল তাদের। সেই তারকা ফুটবলারদের এবার দেখা যাবে নিজেদের মাঠে। শুধু তাই নয়; তারকা আর তরুণ ফুটবলারের সম্মিলনও ঘটছে এই টুর্নামেন্টে। যেখানে মামুনুল, রনি, সোহেলদের সাথে খেলবেন চট্টগ্রামে প্রথম বিভাগ লীগে খেলা একেবারে তরুণ ফুটবলারও। এছাড়া দেশে মুজিব বর্ষের সব কর্মসূচি স্থগিত করা হলেও চট্টগ্রাম এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কারণ মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন। পাশাপাশি এই টুর্নামেন্টের যে বাজেট সেটাও চট্টগ্রামে প্রথম। এত বাজেটের কোনো টুর্নামেন্ট এর আগে আয়োজিত হয়নি চট্টগ্রামে। এ যেন চট্টগ্রামে ফুটবলের নতুন এক যাত্রা।
চার দলের এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছেন প্রায় ৯২ জন ফুটবলার। আর প্রতিটি দল খেলবে তিনটি করে ম্যাচ। টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৮ অক্টোবর। এই টুর্নামেন্টের আয়োজক হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা সবার আগে মাঠে ফুটবল নামানোর কৃতিত্বের দাবিদার। পাশাপাশি চট্টগ্রামের ফুটবলাররাও পেলেন সবারে আগে মাঠে নামার সুযোগ। দেশের কোথাও যখন খেলাধুলা বা ফুটবলাররা মাঠে অনুশীলনে নামার সাহস দেখাতে পারেননি সেখানে চট্টগ্রামের ফুটবলাররা মাঠে ম্যাচ খেলতেই নেমে যাচ্ছেন। ফুটবলের এই নতুন যাত্রা যাতে না থামে সে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।