নতুন নামে আনসার আল ইসলাম, কক্সবাজারে ৩ সদস্য আটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি

উগ্রবাদী পুস্তিকা, লিফলেট ও বিস্ফোরক তৈরির ম্যানুয়াল উদ্ধার | শনিবার , ২৯ জুন, ২০২৪ at ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ

নতুন নামে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর অভিযানে স্তিমিত হয়ে পড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’। ‘আসশাহাদাত’ গ্রুপ নামে কক্সবাজারে সংগঠনটি নতুন সদস্য সংগ্রহ ও তৎপরতা চালানোর সময় র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে সংগঠনটির তিন সক্রিয় সদস্যকে আটক করার কথা জানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় উগ্রবাদী পুস্তিকা, লিফলেট ও বিস্ফোরক তৈরির ম্যানুয়াল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।

আটককৃতরা হলজামালপুরের ইসলামপুর এলাকার আবদুল ওহাবের ছেলে মো. জাকারিয়া মণ্ডল (১৯), ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার নুরুল আমিনের ছেলে মো. নিয়ামত উল্লাহ (২১) ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. ওজায়ের (১৯)। র‌্যাব১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানান, র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব১৫ এবং র‌্যাব৭ যৌথভাবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত চৌফলদন্ডী এলাকায় এ অভিযান চালায়। অভিযানে ৩ জনকে আটক করা হয়। এই ৩ জনই ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সক্রিয় সদস্য। তারা আফগানিস্থানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামে’ যোগদান করে। তিনি বলেন, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের ফলে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ে। এ কারণে সংগঠনটির নতুন সদস্য সংগ্রহসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু তাদের কার্যক্রম চলমান রাখতে আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘আসশাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এই গ্রুপটি পার্শ্ববর্তী একটি দেশ হতে পরিচালিত হচ্ছে এবং এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৮৫ থেকে ১০০ জন। গ্রুপটির উদ্ভাবক হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক হাবিবুল্লাহ এবং কথিত আমির সালাহউদ্দিন। এছাড়া তারা বাংলাদেশকে এই সংগঠনের একটি শাখা বলে দাবি করে।

কমান্ডার আরাফাত আরও বলেন, গ্রুপটির বাংলাদেশের আঞ্চলিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির ইসমাইল হোসেনকে এর আগেও র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। এই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা আনসার আল ইসলামের নাম ব্যবহার না করে ‘আসশাহাদাত’ গ্রুপের নামে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের সদস্যদের ও নতুন সদস্য সংগ্রহ করে তাদেরকে বিভিন্ন অপব্যাখা ও মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে দেশের বিচার ও শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য সদস্যদেরকে উগ্রবাদী করে তুলতো। এ উদ্দেশ্যে সংগঠনের সদস্যদেরকে তারা বিভিন্ন উগ্রবাদী পুস্তিকা, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে সরবরাহ করতো। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা ধর্মীয় স্থাপনা, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আইনশৃক্সখলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও নেতৃস্থানীয় অনেক সদস্য গ্রেপ্তার হয়। এখন সংগঠনটি পুনরুজ্জীবিত করতে তারা নতুন সদস্য সংগ্রহ করছে। উঠতি বয়সী কিশোরদের টার্গেট করে তারা সদস্য করছে। সংগঠনের অধিকাংশ সদস্যই ১৯২০ বছর বয়সী তরুণ, মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষক। জঙ্গি সংগঠনটির বাংলাদেশের পরবর্তী সম্ভাব্য আমিরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এরা কক্সবাজারে একত্রিত হয়েছিল।

তিনি জানান, আটক জাকারিয়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়াস্থ একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত। তার সাথে এক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠনের আমির সালাহউদ্দিন ও ইসমাইলের পরিচয় হয়। এই পরিচয় সূত্রে আমির সালাউদ্দিন ও বাংলাদেশের আমির ইসমাইলের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে এই সংগঠনের যোগদান করে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। পরবর্তীতে সে আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘আসশাহাদাত’ গ্রুপের ময়মনসিংহ ও জামালপুর অঞ্চলের দাওয়াতি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। নিয়ামত এবং ওজায়ের চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি মাদ্রাসার কিতাব শাখায় অধ্যয়নরত। তারাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপে একজন জঙ্গি নেতার সাথে পরিচয় হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে এবং তারা মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।

এ ব্যাপারে আটকদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেঙ্গু এবার কতটা ভোগাবে?
পরবর্তী নিবন্ধএ বছর ৫৩ বাংলাদেশি হাজীর মৃত্যু