বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম মহানগর এবং চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নতুন আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখান করেছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের একাংশ। বিভিন্ন অভিযোগ তুলে এ কমিটি বাতিল করার দাবিতে দিনভর চট্টগ্রাম নগরে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীদের একটা অংশ। এতে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর এবং দক্ষিণে ‘একপাক্ষিক’ কমিটি দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন একাংশ।
তাদের দাবি– ২৪’র স্পিরিটের সঙ্গে বেঈমানি করা হয়েছে। তাই এ কমিটি অবাঞ্চিত ঘোষণার পাশাপাশি পদত্যাগ করার কথাও জানান তারা। কমিটি ঘোষণার পর এর প্রতিবাদে কমিটির প্রায় ৫০ জনের মতো পদত্যাগ করেছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেয় কমিটিতে থাকা শিক্ষার্থীদের একাংশ। এসময় তারা বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন এবং অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, তিন কমিটির অন্তত ৫০ জন পদত্যাগ করেছেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে তিন কমিটিতে থাকা ৩০ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কমিটিতে সম্মুখযোদ্ধাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। একপক্ষীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে। সনাতন ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। নারী সহযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। সেখানে বক্তব্য দেন নতুন কমিটিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা জোবায়রুল আলম, নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা চৌধুরী সিয়াম ইলাহি ও সংগঠক আবু বাছির নাঈম।
ঘোষিত মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া চৌধুরী সিয়াম ইলাহি বলেন, যদি কোনো কারণে এ কমিটি বাতিল না করে উল্টো তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা হাসনাত আবদুল্লাহকে বীর চট্টলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করব। দক্ষিণ জেলার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা জোবায়রুল আলম বলেন, চট্টগ্রামের স্থানীয়, আহত, মূল আন্দোলনকারী এবং নারীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে নতুন কমিটিতে। এসময় সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো মূল আন্দোলনকারীদের নিয়ে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করতে হবে, আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটি গঠনের আগে অভিযুক্ত সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে এবং ব্যক্তির পছন্দে গঠিত কমিটিসমূহ গঠনের সঙ্গে জড়িতদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনের পর কমিটি বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধের ডাক দেন উপস্থিত নেতা–কর্মীরা। গতকাল বেলা সোয়া একটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জামালখান, আসকার দীঘির পাড় ও কাজীর দেউড়ি হয়ে টাইগারপাস মোড়ের দিকে যান শিক্ষার্থীরা। এরপর সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের টাইগারপাসমুখী সড়কে বসে অবরোধ করেন তারা। গতকাল বেলা দেড়টার দিকে লালখান বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ শুরু করেন কিছু শিক্ষার্থী। এর মধ্যে নতুন তিন কমিটি থেকে পদত্যাগ করা প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন ছিলেন। সড়কের এক পাশ অবরোধ করা হলেও অন্য পাশ দিয়ে যান চলাচল অব্যাহত ছিল। তবে এর প্রভাবে লালখান বাজারসহ আশপাশ এলাকাগুলোয় দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। সর্বশেষ রাত নয়টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ত্যাগ করেন। এ ব্যাপারে মহানগর কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া রিদুয়ান সিদ্দিকী আজাদীকে বলেন, আমরা এ কমিটির বিলুপ্তি চাই। আমরা চাই যারা বিতর্কিত রয়েছেন তাদের বাদ দিতে হবে। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচির ব্যাপারে পরে জানানো হবে।
আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদ। তিনি লেখেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামে উদ্ভূত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার আগে করা না হলে আমি এবং সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সহযোদ্ধাসহ এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে যেতে বাধ্য হব। যদিও গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।