নতুন ঠিকাদার নিয়োগের পর দশ মাসেও সুখবর নেই

আনোয়ারায় চায়না ইকোনমিক জোন

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | মঙ্গলবার , ২১ মে, ২০২৪ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারায় প্রস্তাবিত চায়না ইকোনমিক জোন প্রকল্পটির কোনো অগ্রগতি নেই। গত বছরের আগস্ট মাসে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশনকে (সিআরবিসি) দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) দিকে। অবকাঠামোগত সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করাসহ প্রক্রিয়াগত কিছু সিদ্ধান্তের জন্য ঝুলে আছে ৫৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের প্রকল্পটি।

ইকোনমিক জোন প্রকল্পের অ্যাডমিন সুপারভাইজার মোহাম্মদ ফিরোজ বলেন, মূলত আমরা এখনো বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের সাথেই সংযুক্ত আছি। কী হবে, হচ্ছে, তার হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। যতদূর জেনেছি, বেজার প্রক্রিয়াগত কাজগুলো হতে আরো ৪ মাস লাগতে পারে। এরপরই এই প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে বলা যাবে। বর্তমানে কয়েকজন সিকিউরিটি দিয়ে প্রকল্প এলাকা পাহারা দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।

২০১৬ সালে আনোয়ারার কালাবিবির দিঘির মোড়ের কাছে যখন প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় তখন ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল। একই দিনে উদ্বোধন হওয়া বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হয়ে গেছে অনেক আগেই। অবশ্য টানেল চালুর পর প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোন এলাকার অর্থনৈতিক মূল্য বেড়েছে। টানেল সড়ক থেকে ২০০ গজ দূরত্বে ব্রিক সলিনের ৪০ ফুট প্রশস্ত সড়কটি চলে গেছে প্রকল্পের গেট পর্যন্ত। চুক্তির প্রথম তিন বছরে প্রকল্প এলাকার ২শ একর পাহাড়ি টিলা সমান করা হয়। বৈরাগ থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত চার লেনের এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের বৈরাগ অংশে প্রায় এক কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর রয়েছে। এরপর ৮ বছরে কাজের কাজ কিছু হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্পের মূল ফটক ও ভেতরের অস্থায়ী কাঠামোর ভবনে সাইনবোর্ড ঝুলছে। আর কোনো কার্যক্রম নেই। সামনের রাস্তায় গরু চরছে। ৫/৬ জন নিরাপত্তাকর্মী আর কয়েকজন ক্লিনার মিলে পাহারা দিচ্ছেন এলাকাটি।

গত বছরের ১৬ আগস্ট চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (সিইআইজেড) গড়ে তোলার কাজটি আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয় চীন সরকারের মনোনীত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরবিসিকে। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (ডিপিএম) মাধ্যমে সিআরবিসির সঙ্গে চুক্তির জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) একটি প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। চীনা প্রতিষ্ঠানটি ৭৮৪ একর জমিতে জিটুজি (দুই দেশের সরকারি পর্যায়) ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার কথা। জোনটি সম্পূর্ণরূপে চীনের উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দকৃত। এই অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চলে কেমিক্যাল, অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলি, গার্মেন্টস ও ওষুধ কারখানা হওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।

এরপর বেজার চেয়ারম্যান আনোয়ারায় প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যান দ্রুত জমা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপরও প্রকল্পের তেমন অগ্রগতি হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত ঠিকাদার জটিলতার কারণেই থেমে আছে এই প্রকল্পের কাজ। কী কারণে এই বিলম্ব, জটিলতা ঠিক কোথায় তাও কোনো পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হচ্ছে না।

২০১৪ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরকালে চীনা সরকার চট্টগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনের আগ্রহ ব্যক্ত করে। ওই সফরে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর দুই বছর পর চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ঢাকা সফরে এলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ সময় ঠিক হয় অর্থনৈতিক অঞ্চলটির অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও বেজার সঙ্গে চায়না হারবারের চূড়ান্ত চুক্তি না হওয়ায় ছয় বছর পর দায়িত্ব দেওয়া হয় চীন সরকারের মনোনীত সিআরবিসিকে। এরপর এক বছর পার হতে চলল। এখনো আলোর মুখ দেখেনি বড় কর্মসংস্থানের এই ইকোনমিক জোন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে বিএনপির ৩ নেতাকে বহিষ্কার
পরবর্তী নিবন্ধবান্দরবানে দুই কোটি ৭০ লাখ টাকার আফিমসহ নারী গ্রেপ্তার