পদ্মা অয়েল কোম্পানি ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের নিজস্ব ডলফিন জেটি থাকলেও নেই যমুনা অয়েল কোম্পানির। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রীয় জ্বালানি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে একমাত্র পল্টুন জেটি ব্যবহার করে চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনা থেকে দেশের বিভিন্ন নৌ-ডিপোতে কোস্টাল ট্যাংকারের মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহ করে আসছে। বর্তমানে পল্টুন জেটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় যেকোনো সময় জ্বালানি সরবরাহে মারাত্মক ব্যাঘাত তৈরি হতে পারে বলে আশংকা করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। যে কারণে পল্টুন জেটিকে বর্ধিত করে আরসিসি জেটি নির্মাণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি চেয়েছে যমুনা অয়েল কোম্পানি।
বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া পত্রসূত্রে জানা গেছে, পতেঙ্গা গুপ্তখালে যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রধান ডিপোর পল্টুন জেটির সুইং ব্রিজের কর্ণফুলী নদীর তীর সংলগ্ন সাপোর্ট, ফাউন্ডেশন, এমএস পাইপের পোস্ট এবং কংক্রিট কাঠামো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে জেটিটির ভার বহন, নদীর স্রোতের টান সহ্য করা, ঝড়-বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেটিতে ট্যাংকার বার্থিং অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি তেল লোড-আনলোড কাজের কারণে ‘এলজে-৩’ নামের পল্টুন জেটির পাশে নদীর তীরে নির্মিত জেটি হাউজের কলামেও ফাটল ধরেছে। বর্তমানে ফাটল বেড়ে কলামের রেইনফোর্সমেন্ট অকেজো হয়ে পড়েছে এবং লবণাক্ত স্থানের স্ট্রাকচার বর্তমানে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক জ্বালানি চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে কোস্টাল ট্যাংকারে জ্বালানি সরবরাহও আগের তুলনায় বাড়ছে। সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে পরিশোধিত জ্বালানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখালস্থ তিন বিতরণ কোম্পানির প্রধান স্থাপনা থেকে এসব জ্বালানি সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য পদ্মা অয়েল কোম্পানি নিজেদের ডলফিন জেটি ডিওজে-৬ ও পল্টুন জেটি এলজে-৫ এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানি ডলফিন জেটি ডিওজে-৫ ও পল্টুন জেটি এলজে-৪ ব্যবহার করে অপারেশনাল কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। কিন্তু জেটির কারণে বিপিসির আমদানি করা জ্বালানির লাইটারিং এবং অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রায়শঃ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বলে জানিয়েছে যমুনা অয়েল কোম্পানি।
এ ব্যাপারে যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনচারী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘যমুনা অয়েলের পল্টুন জেটিটি সম্প্রসারণ করে স্থায়ী পাকা জেটি নির্মাণের জন্য এর আগে বেশ কয়েকবার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ জেটি সম্প্রসারণসহ আরসিসি জেটি নির্মাণের অনাপত্তি না দেওয়ার কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পল্টুন জেটিটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই জেটি যদি অকার্যকর হয়ে যায় আমাদের পুরো অপারেশনাল কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে।’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে যমুনার বোর্ড সভায় স্থায়ী আরসিসি জেটি নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিপিসির চেয়ারম্যান মহোদয়ও গত ৩১ ডিসেম্বর প্রস্তাবিত জেটির স্থানটিও পরিদর্শন করেছেন। এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ অনাপত্তি দিলেই জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘দেশের জ্বালানির বেশিরভাগ নদীপথে পরিবহন করা হয়। আমদানিকৃত জ্বালানি অয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন ডিপোতে পাঠাতে হয়। এজন্য জেটি সুবিধা না থাকলে অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হবে। যমুনা অয়েলের যে পল্টুন জেটি রয়েছে, সেটি অনেক বছরের পুরোনো। তারপরেও মেরামত করে এতোদিন ব্যবহার করা হয়েছিল। এখন যমুনা অয়েলের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হলে নতুন জেটি নির্মাণ জরুরি। এখন যমুনা অয়েল বন্দর কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি চেয়েছে। আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে এ নিয়ে আলাপ করছি। আশা করছি, জাতীয় স্বার্থে এবং দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখতে এবার বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সম্মত হবে।’