নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের সমন্বয়করা

শীর্ষ পদে আসা নিয়ে দুই গ্রুপের হাতাহাতি-সংঘর্ষ

| বৃহস্পতিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নামে নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নতুন এই ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ‘স্টুডেন্ট ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সংগঠনটি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দলীয় লেজুড়বৃত্তি না করা, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা এবং দলীয় নেতাদের চাঁদায় দল পরিচালনা করার কথা বলছেন সংগঠনটির নেতারা। এ ছাড়া কেন্দ্রে ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ইউনিটগুলোতে স্নাতকে ভর্তি হওয়া থেকে ৭ বছর পর্যন্ত সংগঠনটির দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে সামনে রেখে একটি নতুন ধারার রাজনীতির সূচনা করতে এই নতুন ছাত্রসংগঠন গঠন করছেন বলে সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।

প্রাথমিকভাবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার আহ্বায়ক পদে এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম দায়িত্ব নিয়েছেন। সদস্যসচিব পদে জাহিদ আহসান, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশীদ, মুখ্য সংগঠক পদে তাহমীদ আল মোদ্দাসসীর চৌধুরী এবং মুখপাত্র পদে আশরেফা খাতুন রয়েছেন।

সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে আহ্বায়ক পদে আব্দুল কাদের, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক লিমন মাহমুদ, সদস্য সচিব পদে মহির আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব আলআমিন, মুখ্য সংগঠক পদে হাসিব আল ইসলাম এবং মুখপাত্র পদে রাফিয়া রেহনুমা হৃদি রয়েছেন।

এর আগে কমিটি ঘোষণার বিরোধিতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ করেন, জুলাই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও নতুন ছাত্র সংগঠনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিক্ষোভের মধ্যেই মধুর ক্যান্টিনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

নতুন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের পরিচয় : বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়কের দায়িত্ব পাওয়া আবু বাকের মজুমদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯২০ সেশনের শিক্ষার্থী। যে ৬ জন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তারমধ্যে তিনি একজন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগে তিনি আখতার হোসেন ও নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব ছিলেন। এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

কেন্দ্রের সদস্য সচিব পদে আসা জাহিদ আহসান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দপ্তর সেলের সম্পাদক ছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এ ছাড়া আবরার ফাহাদের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে হামলার শিকার হন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৮১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।

সংগঠনটির মুখ্য সংগঠক পদে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমীদ আল মুদ্দাসসীর চৌধুরী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক সংসদের সহসভাপতি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়ক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। তিনি ‘একতার বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করেন। অভ্যুত্থানের পর গত কয়েক মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত একাধিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

সংগঠনটির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্বে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থী আশরেফা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনিও সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক পদে এসেছেন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের। আব্দুল কাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যখন প্রথম সারির সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনি সামনে এগিয়ে আসেন এবং গণঅভ্যুত্থানের ৯ দফা ঘোষণা করেন; যা আন্দোলনকে একদফার দিকে নিয়ে যায়। এর আগে তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য সচিব পদে আসা মহির আলম গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন। এ ছাড়া মুখ্য সংগঠক পদে আসা হাসিব আল ইসলাম সমন্বয়ক হিসেবে জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০২১ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। এর আগে তিনি আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র হিসেবে আসা বাংলাদেশ কুয়েতমৈত্রী হলের শিক্ষার্থী রাফিয়া রেহনুমা হৃদি সমন্বয়ক হিসেবে জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখেন। এ ছাড়া নারীদের হলে আবাসন সংকট নিরসনসহ একাধিক আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনিও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯২০ সেশনের শিক্ষার্থী।

শীর্ষ পদে আসা নিয়ে দু’গ্রুপের হাতাহাতিসংঘর্ষ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উদ্যোগে নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশের আগেই শীর্ষ পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। সংগঠনের আত্মপ্রকাশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভের মধ্যে হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে নতুন ছাত্র সংগঠনের একদল নেতাকর্মী ‘শিক্ষাঐক্যমুক্তি’ এবং ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নামে স্লোগান দেন। ৪টা ৫৫ মিনিটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে একটি দল স্লোগান দিয়ে মধুর ক্যান্টিনের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসময় স্লোগান দেন ‘ঢাবির কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’।

ডাকসু ভবনের সামনে ও মধুর ক্যান্টিনের ভেতরেও নতুন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে আসা বাকেরজাহিদ ও সংগঠনের নামে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। নতুন ছাত্র সংগঠনের উদ্যোক্তারা বলেছেন, মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদের শীর্ষ পদে আসা নিয়ে বিভক্তির সূত্রপাত। রিফাত রশিদ শীর্ষ চার পদের একটিতে আসতে চাইলেও নারী সদস্যদের বিরোধিতার কারণে তাকে শীর্ষ পদ দেওয়া হয়নি। ফলে রিফাত রশিদের অনুসারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও উত্তরার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ দেখান।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে ঢাকা কলজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী নাহিদ হক বলেন, আমি রিফাত রশিদ ভাইয়ের জন্য আসছি। যখন ৬ সমন্বয়ক ডিবি হেফাজতে তখন কোটি টাকার প্রলোভনের মুখেও তিনি আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। এখন রিফাত রশিদকে মাইনাস করা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরমজানে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে করা হচ্ছে স্পেশাল কন্ট্রোল রুম
পরবর্তী নিবন্ধমহাসড়কে লবণ ফেলে ও গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিক্ষোভ