নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তৎপর থাকতে হবে

| রবিবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালা খোলা শুরু হলো আজ। দীর্ঘ দেড় বছর পর ক্লাস হবে, এ খুশিতে উল্লসিত শিক্ষার্থীরা। আজ হেসে উঠবে চিরচেনা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি কীভাবে নিশ্চিত করা হবে এ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যস্ততা ছিল। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে খানিক দূরে বসানো হয়েছে হাত ধোয়ার বেসিন। রাখা হচ্ছে স্যানিটাইজার। স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে টানানো হয়েছে ব্যানার। দুয়েক দিনের মধ্যে অন্য বিদ্যালয়েও লাগানো হবে। প্রধান ফটকে থাকবে শারীরিক তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র। তবে করোনা পরিস্থিতি পুরো নিয়ন্ত্রণে না আসায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ পূর্ণোদ্যমে ক্লাস শুরু হচ্ছে না। প্রথম দফায় চলতি বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস হবে। অন্যদের হবে সপ্তাহে দুদিন। যেদিন বিদ্যালয়ে ক্লাস হবে না সেদিন অনলাইনে ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়ার কাজ চলবে বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এজন্য তৈরি করা হয়েছে রুটিন; যা ইতিমধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাউশি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আলাদা আলাদা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সেগুলো যথাযথ প্রতিপালন হচ্ছে কি না তা দেখতে নিয়মিত বিদ্যালয় মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের। এসব প্রতিবেদন প্রতিদিন মাউশিতে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বাড়লে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধের সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজে ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সংক্রমণের সঙ্গে সবকিছুই জড়িত। সংক্রমণ কমেছে বলেই স্কুল-কলেজ খুলেছে। যদি দেখি আমাদের এখানে সংক্রমণের হার আবার বেড়ে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় তো নেবেই। আমরাও সেভাবেই পরামর্শ দেব। আমরা চাইব না আমাদের ছেলেমেয়েরা সংক্রমিত হয়ে যাক।’
স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও ১৮ বছরের নিচে কোভিড টিকা দেওয়ার অনুমোদন দেয়নি, যদিও কিছু দেশ নিজেদের সিদ্ধান্তে ১২ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দিচ্ছে। পৃথিবীর খুব বেশি দেশে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের টিকা দেওয়া যাচ্ছে না। দুয়েকটা দেশে টিকা দেওয়া হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে, দেখার জন্য যে কী ফলাফল আসে। আমরাও নীতি অনুসরণ করছি। আমরা ডব্লিইএইচওর সঙ্গে আলোচনা করছি, যখন তারা অনুমতি দেবে, তখন আমরা টিকা দেওয়ার চেষ্টা করব।’
প্রায় দেড় বছর পর আজ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে যেভাবে স্কুল কলেজ খুলছে, তাতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কথা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে কোনো জটলা সৃষ্টি না হয় তা নিশ্চিত করারও কথা রয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, আপাতত অ্যাসেম্বলি ধরনের কোনো কর্মসূচি থাকবে না। ওয়াশরুমও পরিচ্ছন্ন রাখা হবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। কেননা, বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত ওয়াশরুমই নেই। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশুদ্ধ পানির সংকট বিদ্যমান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার মতো জায়গা আছে কিনা এটাও এক প্রশ্ন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এর চারপাশের পরিবেশ ঝুঁকিমুক্ত না হলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। শিক্ষার্থীরা যে সড়কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা করবে, সেই সড়ক, গণপরিবহন ও এর আশপাশের পরিবেশকেও ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। আমরা জানি, অনেক বয়স্ক ব্যক্তিই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে গড়িমসি করেন। এ বাস্তবতায় খুদে শিক্ষার্থীদের শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।
আসলে চারদিক থেকে যে চাপ এসেছে সরকারের ওপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য, তার কারণে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা স্বস্তিদায়ক হলেও সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ রাখা না হলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি থেকেই যাবে। অল্পবয়সী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার অভিজ্ঞতা সংশ্লিষ্টদের আছে বলে মনে হয় না। ফলে নতুন বাস্তবতায় নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষকে তৎপর থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে