নতুন চেয়ারম্যান পেয়ারুল ইসলাম

৩১ বছর পর জনপ্রতিনিধির চেয়ারে, পেয়েছেন ২৫৬৭ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী নারায়ণ ১২৪

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। জেলার ১৫টি কেন্দ্রে ২৭৩০ ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ২৬৯৬ জন। এর মধ্যে আনারস প্রতীক নিয়ে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ২৫৬৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নারায়ণ রক্ষিত পেয়েছেন ১২৪ ভোট।
গতকাল সোমবার ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান। এছাড়াও নির্বাচনে ১৫ উপজেলায় ১৫ জন সাধারণ সদস্য ও ৫ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ইভিএমে ভোটগ্রহণ হওয়ায় ২টায় ভোট শেষ হওয়ার পরপরই প্রতিটি উপজেলায় ভোটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। হওয়ার পর ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফটিকছড়ি সংসদীয় আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন। সেই নির্বাচনে পরাজয়ের ফলে দীর্ঘদিন মন খারাপ
থাকলেও এবার ৩১ বছর পর গতকাল চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন তিনি। মাঝ পথে সাংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইলেও মহাজোট থেকে তরিকতের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজিবুল বশর ভান্ডারীকে (এমপি) নৌকা দেন আওয়ামীলীগ। দীর্ঘদিন পর দল ফিরে থাকালো দলের এই ত্যাগী নেতার উপর। নির্বাচিত হয়েছে হাসিও ফুটেছে এটিএম পেয়ারুল ইসলামের মুখে।
গতকাল সকাল ৯টা থেকে জেলার ১৫ উপজেলায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে ১৫টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল থেকেই ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হন। নির্বাচন কমিশন থেকে এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। ভোট কেন্দ্রের গোপনীয়তা রক্ষায় প্রতি কেন্দ্রে তিনটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়। কোনো ভোটারকে মোবাইল নিয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান আজাদীকে জানান, জেলার ১৫ উপজেলায় ১৫টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে জেলা পরিষদের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে একটানা বেলা ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। ১৫ উপজেলায় ২৭৩০ ভোটারের মধ্যে ২৬৯৬ জন ভোট দিয়েছেন। যা ৯৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে আনারস প্রতীকের এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ২৫৬৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিতদ্বন্দ্বী মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নারায়ণ রক্ষিত পেয়েছেন ১২৪ ভোট।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে জানা গেছে, নির্বাচনে শতভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে এটিএম পেয়ারুল ইসলামের নিজ উপজেলা ফটিকছড়ি ও কর্ণফুলী উপজেলায়। এটিএম পেয়ারুল ইসলাম সবোর্চ্চ ভোট পেয়েছেন নিজ উপজেলা ফটিকছড়িতে। এই উপজেলায় ২৬৩ ভোটের মধ্যে ২৬৩ ভোট কাস্ট হয়েছে। এর মধ্যে ২৫৯ ভোট পেয়েছেন তিনি। নারায়ণ রক্ষিত পেয়েছেন ৩ ভোট। ১ ভোট বাতিল হয়েছে। অপরদিকে কর্ণফুলী উপজেলায় ৯২ ভোটের মধ্যে ৯২ ভোট কাস্ট হয়েছে। এর মধ্যে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম পেয়েছেন ৯১ ভোট। আর নারায়ণ রক্ষিত পেয়েছেন ১ ভোট।
অপরদিকে ১৫ উপজেলার মধ্যে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম সাতকানিয়ায় ২১৯, মীরসরাইয়ে ২১৮, পটিয়ায় ২০৮, রাঙ্গুনিয়ায় ২০১, সন্দ্বীপে ১৯২, রাউজানে ১৯১, বাঁশখালীতে ১৮১, হাটহাজারীতে ১৮৪, সীতাকুণ্ডে ১৪১, আনোয়ারায় ১৪৯, লোহাগাড়ায় ১০৪, বোয়ালখালীতে ১১৬ ও চন্দনাইশে ১১৩ ভোট পেয়েছেন।
গতকাল সকাল ৯টা থেকে টানা ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা সদরে স্থাপিত ভোট কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ মনিটরিং করার জন্য প্রতি ভোট কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছিল সিসিটিভি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করেন ঢাকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২৭৩০ জন। ১৫টি ওয়ার্ডের ১৫টি ভোটকেন্দ্রের ৩০টি বুথে চলে ভোটগ্রহণ। ১৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৩০ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ৬০ জন পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রামের জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে সাধারণ সদস্য পদে ৪৬ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নির্বাচনে ৪ উপজেলা থেকে ৪ জন সাধারণ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা হলেন চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) ওয়ার্ডে প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) ওয়ার্ডে কাজী আবদুল ওহার, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) ওয়ার্ডে আবুল কাশেম চিশতী এবং চট্টগ্রাম-১২ আনোয়ারা উপজেলা থেকে এস এম আলমগীর চৌধুরী।
প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ৭ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স। এছাড়া চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে ছিলেন।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ১৯৬০ সালের ১০ আগস্ট ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা সরকারি কর্মকর্তা মরহুম আবুল ফজল বি.এ ও আমেনা বেগমের সন্তান তিনি। তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক। জেষ্ঠ্য সন্তান ও পুত্রবধু সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা। ছোট ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সফল ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তা। এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ২০১৪ সালে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (গাড়ি তৈরির কারখানা) পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে দুর্বল প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তিত করেন।
এটিএম পেয়ারুল ১৯৭৪ সালে মাইজভান্ডার আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল-ছাত্র সংসদে নির্বাচিত জিএস হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হন নাজিরহাট কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি। ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ‘ল’ স্টুডেন্টস ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচিত সভাপতি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক, নব্বইয়ের ছাত্র গণ-আন্দোলনের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। ১৯৮৯ সালে ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফটিকছড়ি সংসদীয় আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারা হলেন সদস্য, কে কত ভোট পেলেন
পরবর্তী নিবন্ধতিন কারবারির ২০ বছরের কারাদণ্ড