প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’–এর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’–এর বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপের সেরা দুই বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ‘ক’ গ্রুপে টাঙ্গাইল জেলার প্রেয়সী চক্রবর্তী এবং ‘খ’ গ্রুপে সুনামগঞ্জ জেলার শুভ মিতা তালুকদার চ্যাম্পিয়ন হয়। তারা প্রত্যেকে একটি করে ক্রেস্ট এবং ৩ লাখ টাকার চেক গ্রহণ করে। খবর বাসসের।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন– তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতায় সারা দেশের হাজারো শিশু অংশ নেয়। নাচ, গান, আবৃত্তি, কৌতুক, গল্প বলা, অভিনয়সহ মোট ১২টি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় আয়োজন নতুন কুঁড়ি। যার মাধ্যমে একসময় দেশের সংস্কৃতি অঙ্গন পেয়েছিল অনেক গুণী ও জনপ্রিয় শিল্পী। উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ রিয়েলিটি শো হিসেবে ১৯৭৬ সালে এটি চালু হয়। শিশু–কিশোরদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহিত করা এবং তাদের জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেওয়াই ছিল এর উদ্দেশ্য। পরবর্তীতে বিটিভি রঙিন যুগে প্রবেশের পর ৮০ ও ৯০ দশক পেরিয়ে ২০০৫ পর্যন্ত প্রতিযোগিতাটি চালু ছিল। সুদীর্ঘ ২০ বছর পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঐকান্তিক নির্দেশনা ও ইচ্ছায় নতুন উদ্যম ও প্রত্যয় নিয়ে নতুন কুঁড়ি ২০২৫–এর যাত্রা শুরু হয়েছে যা একটি নতুন প্রেরণা ও পুনর্জাগরণ।
এবার অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। যেখানে ৩৯ হাজার প্রতিযোগী অংশ নেয়। ৬৪ জেলাকে ১৯টি অঞ্চলে ভাগ করে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক পর্ব থেকে ক ও খ শাখা মিলিয়ে সব ক্যাটাগরিতে প্রায় ১৪ হাজার প্রতিযোগী বিভাগীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়।
এরপরে শুরু হয় নতুন কুঁড়ির বিভাগীয় বাছাই পর্ব। দেশের আটটি বিভাগে একযোগে চলে এই পর্বের অডিশন। সাধারণ ও উচ্চাঙ্গ নৃত্য, দেশাত্মবোধক গান, হামদ–নাত, নজরুল ও রবীন্দ্র সংগীত, আবৃত্তি, গল্পবলা, কৌতুকসহ মোট ১২টি বিষয়ে অডিশন চলে। বিভাগীয় পর্যায় শেষে শুরু হয় চূড়ান্ত বাছাই পর্ব। আটটি বিভাগ থেকে ১ হাজার ৪০ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিযোগী শিশু–কিশোররা আসে নানা রঙে, নানা সাজে। সারা দেশ থেকে আসা ক্ষুদে সব মেধাবী নৃত্যশিল্পীরা তাদের নাচের কসরত দেখায়। জন্ম থেকে পাওয়া একটি মাত্র পা নিয়ে শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করে এই প্রতিযোগিতায় অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চল থেকে আসা একজন নৃত্যশিল্পী।
এরপর চূড়ান্ত বাছাই থেকে উত্তীর্ণ ২৭৯ প্রতিযোগী সেরা ১০ পর্বে অংশগ্রহণ করে। এই পর্ব থেকে প্রতিটি শাখার সব ক্যাটাগরির সেরা পাঁচজন বাছাই করা হয়। সবশেষে কাঙ্ক্ষিত ফাইনাল। ফাইনাল মানেই ছিল তুমুল প্রতিযোগিতা। এর মধ্য দিয়ে আমরা বিজয়ী পেয়েছি– ক বিভাগে ৩৬, খ বিভাগে ৩৭ আর সেরা ১০ নিয়ে একঝাঁক ‘নতুন কুঁড়ি’। যাদের অনেকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। এদের মধ্যে দুই শাখায় দুই সেরা বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে জাতি গঠনে ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করে বলেন, শিশুরা শুধু নাচ–গানে সীমাবদ্ধ থাকবে কেন, তারা প্রযুক্তি, খেলাধুলা ও উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করবে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব উদ্যোগে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধান উপদেষ্টা।











