নতুন কালুরঘাট সেতুর জন্য বিদেশি পরামর্শক নিয়োগের প্রথম ধাপ সম্পন্ন করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রকল্পের কনসালটেন্ট (পরামর্শক) নিয়োগের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে গত মার্চের ১৭ তারিখ। পরামর্শক নিয়োগের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। আগস্টে শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপ।
সেতুর প্রকল্প কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জানা গেছে, প্রথমে পরামর্শক নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ২২ জনের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে থেকে ৮টি গ্রুপে (জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি) ভাগ হয়ে গ্রুপ দরপত্র দাখিল করেছে। এর মধ্যে থেকে যাচাই–বাছাই শেষে ৫টি প্রতিষ্ঠানের শর্ট লিস্ট করা হয়। এই ৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানান কালুরঘাট নতুন সেতুর প্রকল্প পরিচালক ও দোহাজারী–কঙবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী।
তিনি আজাদীকে বলেন, ডিসেম্বরে প্রকল্পের কনসালটেন্ট (পরামর্শক) নিয়োগ সম্পন্ন হবে। ঋণ চুক্তির শর্ত সাপেক্ষে টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। পরামর্শক নিয়োগের পর সেতুর ডিজাইন ফাইনাল হবে। ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে সেতুর টেন্ডার প্রক্রিয়া (ঠিকাদার নিয়োগ হবে) সম্পন্ন হবে। ভূমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, এখন ভূমি অধিগ্রহণের আইন পরিবর্তন হয়েছে। আগে পরামর্শক নিয়োগের পরপরই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হত। ডিসির ফান্ডে (এলএ ফান্ডে) অধিগ্রহণের টাকা জমা দিয়ে দিতে হত। এখন নতুন আইনে ৭ ধারার নোটিশ জারির পরই ডিসির ফান্ডে টাকা জমা হবে।
রেল ভবন সূত্রে জানা গেছে, কালুরঘাট নতুন সেতুর প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। প্রকল্পে মূল সেতু নির্মাণের ৭ হাজার ১২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার। আর ভূমি অধিগ্রহণের ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের।
প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে জানা গেছে, এঙট্রা ডোজ টাইপ সেতুটির একপাশে দুটি ডুয়াল গেজ রেলপথ ছাড়াও অন্যপাশে স্ট্যান্ডার্ড মানের দুই লেনের (প্রতিটি লেন ১৮ ফুট) সড়ক ছাড়াও উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ (পাঁচ ফুট করে) পথচারী পারাপারের সুব্যবস্থা রাখা হবে। সেতুটির নদীর অভ্যন্তরে পাঁচটিসহ মোট সাতটি স্প্যান থাকবে। প্রকল্পের ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকার মধ্যে ৭ হাজার ১২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএফ)। অবশিষ্ট ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের। ভূমি অধিগ্রহণ সরকারি অর্থায়নে হবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি গত বছরের ৭ অক্টোবর একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। মূল প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৭০০ মিটার রেল–কাম–রোড ব্রিজ নির্মাণ, ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ২ দমমিক ৪০ কিলোমিটার সড়ক ভায়াডাক্ট, ৪ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার বাঁধ, ১১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, চট্টগ্রাম এবং কঙবাজারের মধ্যে নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বর্তমান পুরাতন সেতুর পাশে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন রেল–কাম–সড়ক সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রেলপথ মন্ত্রণালয় ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রেল–কাম–সড়ক সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ করবে।