নতুন কারিকুলাম নিয়ে একান্ত ভাবনা

সুলতানা কাজী | সোমবার , ১৫ জুলাই, ২০২৪ at ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ

নতুন। নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা, নতুন পোশাক, নতুন বই, নতুন বাড়ি, নতুন গাড়ি, নতুন গয়না। নতুন সবসময়ই আদরণীয়। নতুনের প্রতি অনাবিল আকর্ষণ আমাদের। নতুন ব্র্যান্ড, নতুন ট্রেন্ড আভিজাত্যের প্রতীক। পৃথিবীর তাবৎ নতুনের প্রতি বিস্ময় আর ভালোবাসা তো আছেই! নতুন বছর, নতুন গান, নতুন কোনো নাটক, নতুন কোনো মুভি, নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ পরম সৌভাগ্যের হয়ে থাকে আমাদের কাছে। নতুন প্রাণের আগমনে সুদীর্ঘ প্রতীক্ষা ভীষণ সুখের! নতুন সবসময়ই নতুন, আধুনিকও। নতুন আবিষ্কারকে নতমুখে সাদর সম্ভাষণ জানাই এবং পাওয়ার জন্য ব্যাকুলও হয়ে পড়ি আমরা। এতো এতো নতুন আমাদের জীবনে! সাবলীলভাবে সব নতুনকে নিজেদের প্রয়োজনে স্বাগত জানিয়েছি। অভিবাদন জানাতে হয় আসলে। নতুনকে নিয়ে আমার এতো প্যাঁচাল পারার কারণও আছে! বলছি তাহলে

২০১০ সাল পর্যন্ত এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিলো পাশ্চাত্যমুখী। ইংরেজরা যখন ভারত শাসন শুরু করে, তখন তাদের প্রয়োজন ছিলো সম্পদ আর সম্পত্তি। তারা শিক্ষা নিয়ে ভাবেনি তখন। যখন নিজেদের প্রয়োজন মনে হলো তখন তারা শিক্ষা নিয়ে ভাবলেন। প্রাচ্যমুখী শিক্ষা হবে নাকি পাশ্চাত্যমুখীএ নিয়ে মতবিরোধে জড়ালেও মূলত পাশ্চাত্যেরই জয় হলো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পাশ্চাত্যমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন ছিলো।

থিংক গ্লোবালি, এ্যাক্ট লোকালি…. মূলত সৃজনশীলতা বিকাশের তাগিদে শুরু হলো ২০২২ সাল থেকে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম। মুখস্ত পদ্ধতির পরিবর্তে নিজে নিজে করার চেষ্টা করবে শিক্ষার্থীরা। নিজে করার আনন্দই আলাদা। এখনো পর্যন্ত প্রতিটা বইয়ে স্পষ্ট লেখা আছে ‘পরীক্ষামূলক সংস্করণ’। ২০১০২০২১এও সৃজনশীলতা ছিলো। তবে, ২০২২ এর নতুন ধারা প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সৃজনশীল করে গড়ে তুলবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি। নতুন নিয়ে গান গাইলাম এ জন্য যে, আমরা সব নতুনকে সুন্দরভাবে নিজেদের প্রয়োজনে মনে স্থান দিই! কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মঙ্গল চিন্তা করে অহেতুক তর্কবিতর্ক, সমালোচনা কেনো বন্ধ করছি না! আমার মনে হচ্ছে, শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন কারিকুলাম যেনো রবীন্দ্রনাথের সেই আধমরাদের ঘা থেকে বাঁচানোরই এক মোক্ষম অস্ত্র! যে অস্ত্রের আঘাতে আধমরাদের ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে দেশ জুড়ে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা,/ ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,/ আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।/ রক্তে আলোর মদে মাতাল ভোরে/ আজকে যে যা বলে বলুক তোরে,/ সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ করে/ পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা। আয় দুরন্ত, আয় রে আমার কাঁচা।’ পৃথিবী বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বদলে যাচ্ছে সময়ও। পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে পথ চলতে হবে আগামী প্রজন্মকে। তারা যেনো হোঁচট না খায়, সেদিকে দেখভাল করার মহান দায়িত্ব আমাদের…. শিক্ষক সমাজের। তাই ইতিবাচক মনোভাব এবং গ্রহণযোগ্য রূপরেখা প্রদানের চেষ্টা করা আমাদের কর্তব্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রসঙ্গ কোটা সংস্কার
পরবর্তী নিবন্ধরবীন্দ্রনাথের বর্ষাপ্রীতি