গত ৫ই আগস্ট ছাত্র জনতার ক্ষোভের গণবিস্ফোরণে পতন ঘটে দীর্ঘ সময়ের স্বৈরাচার শেখ হাসিনার। ১৫৮১ শহীদের রক্তের উপর দাঁড়ানো আজকের নতুন বাংলাদেশ। আমি ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে পরিচয় পাওয়া জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ১৮৮১ জন শহীদরা নতুন অন্য এক বাংলাদেশের স্বপ্ন বুকে নিয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। আমরা এমন এক বাংলাদেশ প্রত্যাশা করি যেখানে সকল ধর্ম–বর্ণ, শ্রেণি–গোত্র, ধনিক–বণিক, শ্রমিক জনতার মাঝে সহাবস্থান বিরাজ করবে। মানবিক ও নান্দনিক ঐক্যের রোল মডেল হবে বাংলাদেশ। পতিত সরকার রাষ্ট্র নামক দেহের সকল অঙ্গকে ধ্বংস এবং অচল করে ফেলেছিল। প্রত্যেকটি সেক্টর এক একটি দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে রূপ নিয়েছিল। নতুন বাংলাদেশে দুর্নীতি নামক বিষাক্ত কালো থাবা থেকে মুক্তি পাবে সাধারণ জনগণ। কোনো সরকারি কর্মকর্তা অবৈধ পথে অমিত সম্পদ কুক্ষিগত করার জন্য সকল সুনীতিকে বিসর্জন দিবে না। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ হবে। এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে বিচারপ্রার্থীকে বিচারের জন্য আদালত প্রাঙ্গণে ঘোরাঘুরির দরকার হবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে।
অন্যায়ভাবে কোনো মানুষ গুম খুন মামলার শিকার হতে হবে না। থানাগুলো হয়ে উঠবে ইনসাফের কেন্দ্রবিন্দু এবং পুলিশ হবে জনগণের। পুলিশ বাহিনী কোনো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে পাখির মতো গুলি করবে না। বাংলাদেশ হচ্ছে বহুজাতিক বহুধর্মের দেশ। সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় কাজ নিশ্চিন্তে পালন করতে পারবে। প্রত্যেকে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যে বসবাস করবে। এমন দেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে দারিদ্র্যের বদলে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, অশিক্ষার জায়গায় সুশিক্ষা, বৈষম্যের বদলে সমতা বিরাজ করবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে প্রতিহিংসা বিভেদের দেয়ালের অবসান হবে। প্রত্যাশা করি নতুন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ চালু করবে যারা কো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের বদলে শিক্ষার্থীর অধিকার নিয়ে কাজ করবে। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজন ইস্পাত কঠিন ঐক্য।