নতুন এক বাংলাদেশের অপেক্ষায় আছি

এমরান হোসাইন | মঙ্গলবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

৪৭, ৫২, ৭১, ২৪একেকটা সংখ্যায় হাজারো মানুষের রক্তস্নাত অধ্যায়। আর এ পটপরিবর্তনে বাংলাদেশের ছাত্রজনতা ও খেটে খাওয়া আমজনতার ন্যূনতম বেঁচে থাকার সুযোগ বারবার হাতছাড়া হয়েছে। আহত পাখির মত হাজারো মানুষ রাজপথ থেকে আশাহত হয়ে নীড়ে ফিরেছে। অবাক করা জুলাই বিপ্লবের একবছর পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। সকালদুপুররাত যেখানে গিয়েছিএকমাত্র বিষয়দেশে কী হচ্ছে, কখন শান্তি হবে, কীভাবে সার্টিফিকেটধারী বেকার যুবকযুবতীর চাকরি পাবে। পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসবে। সবমিলে মনে হয়েছেএক অজানা গন্তব্যে দেশ ছুটছে।

বাংলাদেশের বর্তমান কাণ্ডারী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস। যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত, অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এক জাতিকে টেনে তুলতে ড. মুহাম্মদ ইউনুস যারপর নাই চেষ্টা করছেন। কী এমন দাবী নেই, যা নিয়ে প্রতিদিন কোন না কোন সংগঠন মাঠে নামছে না। রাজনৈতিক দলগুলো তো ইউনুস সরকারের পিছু ছাড়ছে না। পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ দেশটি আসলে কোন পদ্ধতিতে চলছে। তা বোধগম্য নয়। গত ১৬ বছরের একপেশে শাসন; দমননিপীড়নের হাত থেকে আপাতত জনগণ মুক্ত হলেও সরকারি অফিসআদালতগুলোতে সমানতালে হয়রানী চলছে। থেমে নেই বহুল পরিচিত পেশীশক্তির বাণিজ্য। যার প্রত্যক্ষ নিদর্শন দেশের প্রতিটি পরতেপরতে স্পষ্ট দেখা যায়। দেশীয় উৎপাদিত পণ্যবিদেশ থেকে আমদানীকৃত পণ্যে অনিয়ন্ত্রিত দামে বাজার সয়লাব। সবসময়ে সুবিধাভোগী একশ্রেণির মানুষগুলো ব্যাগভর্তি বাজার কিনতে দেখা যায়। বেসরকারি এক হিসেবে দেখা যায়গত দেড় বছরে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। প্রতি বছর নানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে ২২ লাখ যুবক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বক্তব্যে শোনা যায়ভেতরের মানুষটাকে জাগ্রত করুন। কিছু একটা শুরু করুন। কোন কিছুকে না বলা যাবে না। খুব সুন্দর কথা। অন্যদিকে রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের মিথ্যা আশ্বাসের ফুলঝুঁড়ি। নির্মম সত্যকে পাশ কাটিয়ে এসব আশার বাণী এখন সাধারণ মানুষ মন গলে না। মানুষ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। রাজনীতির বলি হয়ে হাজারো নেতাকর্মী বিগত সরকারের কারাভোগের ট্রমা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এ ফাঁকে নির্বাচনী ট্রেন চালু হয়ে গেছেকখনকোথায় গিয়ে থামবে এ ট্রেন যাত্রীরা জানেন না। তবে হাঁ; আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে অনেককে বলতে শুনেছি হাসিনা গেছে এতেই খুশি। আবার বিপরীত কথাও জোরেশোরে শুনা যাচ্ছে আগেই ভালো ছিলাম। এত অল্প সময়ে মানুষ বিরক্ত হয়ে ওঠেছেতা নতুন বাংলাদেশের জন্য শুভ সংবাদ নয়।

দেশের অধিকাংশ মানুষ পলাতক হাসিনা সরকারের মেগা প্রকল্পের সুফলকুফলের সমানতালে ভাগিদার হয়েছে। যা বুঝতে কষ্ট হয়নি। যেহেতু দীর্ঘ একমাস ঢাকাচট্টগ্রামে ছিলাম বেশিরভাগ সময়। শুধুমাত্র একটা উদাহরণ টানছিচট্টগ্রামে মাস্টার প্লানের বাইরে গিয়ে ইটপাথরের ফ্লাইওভার (দেওয়ান হাটস্টেশন রোড) তৈরী। যা চট্টগ্রামে আগামী প্রজন্মদের আকাশ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। এক কথায় পাহাড়নদী সাগরের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরকে দিনে দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ বিপুল টাকা কাদের পকেটে ঢুকেছে তাদেরকে জাতির সামনে আইনের কাটগড়ায় বিচার সময়ের দাবী। দেশজুড়ে যুবকদের আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ছে। তবুও কিছু যুবককে দেখেছিকে কী বলবে পেছনে না তাকিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য সাহস নিয়ে (বাইক চালক, ক্ষুদ্র কৃষি খামার, সফট ওয়্যার ব্যবসা) সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের এক নম্বর দূষিত শহর এখন ঢাকা। যত্রতত্র থুতু ফেলা, মশামাছি, ধূলাবালির শহর। ঢাকা শাহজালাল এয়ারপোর্টকে মনে হলোঅনিরাপদ একমাত্র বিমান বন্দর। সম্প্রতি বিমান বন্দরের ভেতরে পুড়ে যাওয়া কয়লার স্তুপ এখনো পরিষ্কার করা যায়নি। এ দৃশ্য দেখে আমার মনে হলোএকজন বিদেশী বিনিয়োগকারী বিমান বন্দর থেকে ফিরতি বিমানে চলে যাবেন। একমাত্র আন্তর্জাতিক এ বিমান বন্দরে যাত্রীর চেয়ে কর্মচারী কর্মকর্তা বেশি। সবার মধ্যে যেন একজন শিক্ষানবিস ভাব। দেশে প্রকাশ্যেঅপ্রকাশ্যে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সবার মধ্যে এক ধরনের প্রবল কর্তৃত্ববাদের ভাব স্পষ্ট। যা ইনসাফ বা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। যেহেতু প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে এখনো হিন্দুমুসলিম বৌদ্ধখৃষ্টান সবার সহঅবস্থান দৃশ্যমান। তাই সবাই নিজনিজ অবস্থান থেকে আওয়াজ তুলুন -‘সত্যই হউক সব মানুষের’। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। পদার্থবিদরা সময়কে অতীত থেকে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ঘটনাবলীর অগ্রগতি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেন। সময়কে বাস্তবতার চতুর্থ মাত্রা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যা ত্রিমাত্রিক স্থানের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি এমন কিছু নয় যা আমরা দেখতে, স্পর্শ করতে বা স্বাদ নিতে পারি, তবে আমরা এর উত্তরণ পরিমাপ করতে পারি। সময়ের একফোঁড়, অসময়ের দশফোঁড়এ মর্মকথা বাঙালি জাতি বারবার বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও আমরা অর্থহীন প্রশ্ন তুলে জাতিকে বিভক্ত করতে ব্যস্ত ছিলাম। লাখো শহীদের রক্তে কেনা এদেশে বারবার মানুষ আশাহত হয়েছে। সংখ্যার ফ্রেমে বেঁধে রাখা আবেগউচ্ছ্বাসকে বাস্তবতার নিরিখে চলতে দিয়ে একটি বৈষম্যহীনকালোত্তীর্ণ সবার জন্য উন্মুক্ত নতুন এক বাংলাদেশের অপেক্ষায়।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজায়তুননেসা জেবুর ‘আয়রে সোনা লক্ষ্মী সোনা’
পরবর্তী নিবন্ধবন্দর ও টার্মিনালের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে স্বাবলম্বীর দিকে নিয়ে যেতে হবে