করোনাকাল এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু বিসিবি চাইছিল ক্রিকেটারদের মাঠে নামাতে। আর সে লক্ষ্যেই করোনাকালে আয়োজন করা হলো বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ। করোনায় প্রায় সাত মাস মাঠ থেকে বিচ্ছিন্ন ক্রিকেটাররা। যদিও শ্রীলংকা সিরিজের জন্য কিছুদিন অনুশীলন হয়েছে। এ অবস্থায় যেকোনো টুর্নামেন্টে স্বাভাবিকভাবে ক্রিকেটারদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকার কথা নয়। ক্রিকেটে মনোসংযোগ ঘটাতে পারলেই হলো। অন্য সবার মত সে দলেই ছিলেন চট্টগ্রামের তরুন ইরফান শুক্কুর।
যেখানে জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটারদের কোনো লক্ষ্য নেই, সেখানে ইরফানের আর কি লক্ষ্য থাকবে! ইরফান জানালেন, লক্ষ্য বলতে যা ছিল তা হচ্ছে, যদি সুযোগ পাওয়া যায়, তাহলে সেটা কাজে লাগাতে হবে। ইরফানের একাদশে সুযোগ পাওয়াটা ছিল অনিশ্চিত। কারণ তার দলে ছিলেন দেশের সেরা উইকেট রক্ষক মুশফিকুর রহীম। আর যে পজিশনে ইরফান ব্যাট করেন সেখানেও তারকার ভিড়। কাজেই একাদশে জায়গা পাওয়াটা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের।
তবে শেষ পর্যন্ত ইরফান দলে জায়গা পেলেন, খেললেন এবং জয় করলেন। প্রিয় পজিশন ছেড়ে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে নিজেকে নিয়ে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। টুর্নামেন্টে যেখানে দেশসেরা সব তারকা ক্রিকেটার রানের জন্য মাথাকুঁড়ে মরেছে, সেখানে ইরফান রান করেছেন বানের জলের মত। টুর্নামেন্ট শেষে নিজেকে যেন নতুনভাবে চেনালেন ইরফান শুক্কুর।
চট্টগ্রামের যে দুয়েকজন ক্রিকেটারকে গড়ে তোলার জন্য নিবিড় পরিচর্যা করা হচ্ছে তাদের অন্যতম ইরফান শুক্কুর। বাংলাদেশ ‘এ’ দল, একাডেমি দল এবং এইচপি দলের হয়ে খেলা ইরফান রয়েছেন বিসিবির সুরক্ষা বলয়ে। বিসিবি প্রেসিডেন্ট’স কাপে ব্যাট হাতে দারুন সফল ইরফান। যদিও সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। তবে মাত্র ৫ রানে এগিয়ে মুশফিক। ৫ ম্যাচে মুশফিকের রান যেখানে ২১৯, সেখানে ইরফানের রান ২১৪। তাইতো টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যানের পুরষ্কার উঠল ইরফানের হাতে।
টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে চট্টগ্রামের এই তরুনকে। একেক ম্যাচে একেক রকমের চ্যালেঞ্জ ছিল তার জন্য। কারণ প্রতিটি ম্যাচেই দায়িত্ব নিতে হয়েছে তাকে। কোনো ম্যাচে রান করতে হবে। কোনো ম্যাচে রান করার পাশাপাশি বাঁচাতে হবে উইকেটও। আবার কোনো ম্যাচে রান বাড়াতে হবে। সব মিলিয়ে পাঁচ ম্যাচে ছিল পাঁচ রকমের চ্যালেঞ্জ।
তবে একেবারে অপরিচিত পজিশন সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সে সব চ্যালেঞ্জ দারুনভাবে মোকাবেলা করেছেন ইরফান। আর টুর্নামেন্ট শেষে যা পাওয়া গেল, সেটা যেন একেবারেই অপ্রত্যাশিত। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এমনটা মোটেও ভাবেননি চট্টগ্রামের এই তরুন। তবে টুর্নামেন্ট শেষে একটা আফসোস এখন তাড়া করছে ইরফানকে। আর তা হচ্ছে যদি একটি সেঞ্চুরি পাওয়া যেতো। তারপরও সন্তুষ্ট এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কাম উইকেট রক্ষক।
জাতীয় লিগ কিংবা বিপিএল খেলছেন নিয়মিত। কিন্তু এরকম বড় মঞ্চে গিয়ে পুরষ্কার কখনো নেওয়া হয়নি। আবার মুশফিক কিংবা অন্য কোনো বড় ব্যাটসম্যানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করা হয়নি ইরফানের। টুর্নামেন্ট শেষে দেখা যাচ্ছে, মুশফিকের ব্যাটিং গড় যেখানে ৪৩.৮০, ইরফানের সেখানে ৭১.৩৩। মুশফিকের স্ট্রাইক রেট ৬৮.০১, ইরফানের ৮৮.০৬। নিয়মিত ৭ নম্বরে নেমে দলের ও পরিস্থিতির দাবি দারুণভাবে মিটিয়েছেন ইরফান। দল বিপর্যয়ে পড়েছে, ইরফান উদ্ধার করেছেন। দলের দ্রুত রান প্রয়োজন, ইরফান ঝড় তুলেছেন।
এ যেন অন্য এক ইরফান শুক্কুর। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ৭৮ বলে অপরাজিত ৫৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ জেতান ইরফান। পরের ম্যাচে করেন ২৪ রান। তৃতীয় ম্যাচে আবার ঝড় তুললেন ব্যাট হাতে। এবার খেললেন ৩১ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। ফাইনালের আগের ম্যাচটিতে তেমন হাসেনি ইরফানের ব্যাট। তবে ফাইনালে আরো একবার কচুকাটা করলেন প্রতিপক্ষের বোলারদের। খেললেন ৭৭ বলে ৭৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। যে ইনিংসটি না হলে ইরফানের দল শতরান পার করতে পারতো কিনা সংশয় ছিল। এভাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন চট্টগ্রামের এই তরুন।
টুর্নামেন্টের ৫ ইনিংসে ২১টি চার এবং ৫টি ছক্কা মেরেছেন ইরফান; যা কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। চট্টগ্রামের এই তরুনের ব্যাটিং দেখে দারুন মুগ্ধ বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বিসিবি পরিচালক আকরাম খান। ইরফানের মধ্যে উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছেন এই কিংবদন্তী। আর ইরফানও চাইছে সে পথে হাঁটতে। থামতে চান না সহজে। নিজেকে আরো প্রস্তুত করতেও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ইরফান শুক্কুর।