নড়বড়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটি

সংস্কার নিয়ে এলজিইডি ও জেলা পরিষদের রশি টানাটানি বালু উত্তোলনে খুঁটির তলা ক্ষয়ের ঝুঁকি

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শনিবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

টেকনাফের শেষ সীমান্তের সাগরবেষ্টিত শাহপরীর দ্বীপে ২০০৪ সালে নির্মিত হয়েছিল ৫৫০ মিটার লম্বা জেটি। নাফনদীর ওপর নির্মিত জেটিটির গুরুত্ব অত্যধিক। কিন্তু নির্মাণের পর ২১ বছর পার হলেও কোনো সংস্কার হয়নি জেটিটির। এতে ক্রমান্বয়ে এর অবকাঠামো নানাভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে ধসে পড়ছে জেটির র‌্যালিংসহ বিভিন্ন অংশ। অন্যদিকে অনতিদূরে সাবরাং এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন নির্মাণে নদীর ওই অংশ থেকে তোলা হচ্ছে বালু। ড্রেজার মেশিন দিয়ে লাগাতার বালু তোলায় জেটির খুঁটির তলা ক্ষয়ের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। দুদিক মিলে বড়ধরনের দুর্ঘটনার আশংঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নির্মাণের একটি লম্বা সময় অতিক্রান্ত ও লবণাক্ততার প্রভাবেই জেটিটির বিভিন্ন অংশ ক্ষয়ে পড়েছে। কিন্তু সংস্কার বিষয়ে রশি টানাটানি করছে এলজিইডি ও জেলা পরিষদ। দ্বীপের বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী জসিম মাহমুদ জানান, বাংলাদেশমিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা শাহপরীর দ্বীপের জেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও নির্মাণের পর কোনো সময় সংস্কার করতে দেখা যায়নি। ফলে জেটির রেলিং কন্টাক্ট্রশন যা আছে সব ভেঙে যাচ্ছে। বর্তমানে জেটির অবস্থা খুবই নড়বড়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শাহপরীর দ্বীপ অংশের নাফ নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে ভরাট করা হচ্ছে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের নিচু এলাকা। প্রায় হাজার একর সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ভরাটের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে শাহপরীর দ্বীপের পর্যটন জেটিসহ এলাকাটি। বালু উত্তোলনের কারণে জেটির খুঁটির আশপাশ দেবে যাচ্ছে। ফলে জেটির রেলিংসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে। মেসার্স চায়না হারবাল নামের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান এই বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে ইতিপূর্বে মানববন্ধন করেছিল স্থানীয় লোকজন। সাবরাং ইউপির শাহপরীর দ্বীপ এলাকার ইউপি সদস্য আবদুস সালাম জানান, নাফনদী এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন এই জেটিতে। এছাড়া জেটি দিয়ে সেন্টমার্টিনও চলাচল করে থাকে। ফলে জেটি ঘিরে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন পেশাজীবীর আয়রোজগারে। এই জেটি ধসে পড়লে কষ্টে পড়বে পুরো দ্বীপবাসী। তাই খুব দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সেন্টমার্টিনে পযর্টকসহ জেলেদের নৌযান এবং মিয়ানমারের পশু করিডোর সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে এলজিইডি ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৪ সালে জেটিটি নির্মাণ করেছিল। এ জেটিতে বিশ্রামাগার, শৌচাগার ও চারটি সিঁড়ি রয়েছে। এছাড়াও জেটি ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে জেটিটির পাশে রাখা হয়েছে গাড়ি পার্কিং স্পট। পরে জেটিটি জেলা পরিষদকে হস্তান্তর করলে ২০০৬ উদ্বোধন করে উন্মুক্ত করা হয়।

এই জেটির শৃক্সখলা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশবিজিবি। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জেটিতে বড় ধরনের কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হয় না। জেটির অবস্থা খুব নাজুক হওয়ায় এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেটিটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সংস্কারে রশি টানাটানি করছে এলজিইডি ও জেলা পরিষদ। পরস্পরের ওপর দায় চাপিয়ে সংস্কারের বিষয়ে নীরব রয়েছে দুই সংস্থা।

এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমারুফ বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপ জেটি সংস্কারের বিষয়ে এক বৈঠকে এলজিইডিকে একটি চিঠি পাঠানোর আলোচনা হয়েছে। চিঠির প্রেক্ষিতে জেটি সংস্কারের বাজেট নির্ধারণ করে দেবে তাঁরা। তারপর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

তবে টেকনাফ উপজেলা প্রকৌশল কর্মকর্তা রবিউল হোসাইন বলেন, ‘জেটিটি জেলা পরিষদকে ২০০৪ সালে হস্তান্তর করা হয়েছে। তখন থেকে জেটি সংস্কার ও দেখভালের দায়িত্ব তাদের (জেলা পরিষদের)। এতে আমাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই।’

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ শাহপরীর দ্বীপ জেটির বিষয়ে জেলা পরিষদকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সংস্কারের কাজ করবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাব্য সংকট, নির্মাণাধীন নতুন জেটিতে আশা
পরবর্তী নিবন্ধযেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে সংকল্পবদ্ধ হওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের