দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্পর্কে তরিকত ফেডারেশন চেয়ারম্যান ও ফটিকছড়ির সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর ‘চামড়া সব ছিঁড়ে ফেলব’ দেওয়া বক্তব্য সমীচীন নয় বলে মনে করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, আমরা সবাই কেমন যেন অসহিষ্ণু হয়ে পরছি। সিভিল সোসাইটির একজন মানুষ, ভালোভাবে বলতে পারতেন। তাঁর মন্তব্য আরও সুন্দর হওয়া উচিত ছিল।’
‘চামড়া সব ছিঁড়ে ফেলব’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ মন্তব্য করেন। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতে তুলে ধরেন আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্যের এই বক্তব্য একটি প্রতিষ্ঠানের উপর আঘাত। সাংবিধানিক পদে থেকে একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এভাবে বক্তব্য দিলে আমরা কোথায় যাব?’
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘উনি একজন সংসদ সদস্য। দুদকের মামলা নিয়ে কোনো কারণে সংক্ষুব্ধ হলে তিনি উপযুক্ত আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন। তা না করে জনসম্মুখে এভাবে বলতে পারেন না। তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া যেতে পারে।’ তখন আদালত বলেন, ‘মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। আপনারা (দুদক) আপনাদের কাজ করেন।’
প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, দুদকের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন চট্টগ্রাম–২ ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। এই সংসদ সদস্য বলেছেন, ‘দুদক নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে চেনে নাই, যা তা কমেন্ট করছেন সহকারী পরিচালক। চামড়া সব ছিঁড়ে ফেলব। মাইজভাণ্ডারীর গায়ে হাত!’ গত সোমবার রাতে মাইজভাণ্ডারী শাহী ময়দানে সংসদ সদস্যের পিতা সৈয়দ শফিউল বশর মাইজভাণ্ডারীর ১০৪তম খোশরোজ শরিফ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তরিকত ফেডারেশন চেয়ারম্যান এ হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে তরিকত চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী সাংবাদিকদের বলেন, মামলার মূল টার্গেট আমি, আমার ছেলেরা নন। সরকার আমার কাঁধের ওপর দিয়ে স্বার্থ হাসিল করেছে। কিন্তু আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাকে ‘সাইজ’ করতে সরকারের ভেতরে থাকা কারও ইন্ধনে এই মামলা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগে নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী দুই ছেলে তৈয়বুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও সৈয়দ আফতাবুল বশর মাইজভাণ্ডারী সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর ছেলে সৈয়দ তৈয়বুল বশর ও সৈয়দ আফতাবুল বশর শর্ত সাপেক্ষে পাঁচ বছর মেয়াদি টার্ম ঋণের জন্য আবেদন করেন। দেখা যায়, তাদের আবেদনের দুদিন আগে অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর প্রাইম ফাইন্যান্সের বোর্ড সভায় ঋণ দুটি অনুমোদন করা হয়। সৈয়দ তৈয়বুল বশরকে ২০ কোটি টাকা ও সৈয়দ আফতাবুল বশরকে ১৯ কোটি ৪০ রাখ টাকা টার্ম ঋণ দেয় প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। ওই ঋণ তারা ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে নিয়েছেন বলেও দুদকের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।












