নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি দূষণের উৎসগুলো নির্মূলে উদ্যোগী হতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এই দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার কারণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে প্রায় ৬ দশমিক ৮ বছর। এলাকা ভেদে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। আর সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মধ্যে বায়ু অন্যতম। আমাদের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত পরিবেশ ও নির্মল বাতাস। আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্যানুযায়ী, ২০৪ স্কোর নিয়ে এদিন বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে স্থান করে নেয় ঢাকা। ২০১ থেকে ৩০০এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা দুঃখ করে বলেন, আমাদের দেশে দিন দিন নির্মল বায়ু বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে। বিশ্বের যেসব দেশের বায়ু ভয়াবহ দূষণের শিকার বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। নতুন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলারই বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। আদর্শ মাত্রার মধ্যে আছে মাত্র ১০টি জেলার বায়ুর মান। এ অতিরিক্ত বায়ু দূষণের কারণে সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতায়।

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত অঞ্চলগুলোর অন্যতম দক্ষিণ এশিয়ায় বাড়তে থাকা বায়ু দূষণের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল পাঁচ বছরেরও বেশি হ্রাস পেতে পারে বলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (ইপিআইসি)-এর প্রতিবেদনে জনস্বাস্থ্যের ওপর দূষিত বায়ুর ক্রমবর্ধমান ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত কয়েকটি দেশের অবস্থান, এগুলো হল, বাংলাদেশে, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান। দূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষ মোট যতো বছর আয়ুষ্কাল হারায় তার অর্ধেকেরও বেশি ঘটে এই দেশগুলোতে। এই অঞ্চলে দ্রুত শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বায়ুর গুণমান হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে এখানে কণা দূষণের (পিএম ২.) মাত্রা এই শতাব্দীর শুরুর দিকের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি। এখানে দূষণ এখন বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত হুমকির বিপদগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। ইপিআইসির গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আসলে উদ্বেগজনকভাবে পরিবেশ দূষণের কবলে পড়েছে নগরী। শুধু চট্টগ্রাম নগর নয়, দেশের প্রায় সব বড় বড় শহরগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। করোনা মহামারির সময়ে সাধারণ মানুষ এবং যানবাহনের চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া এবং ধূলি ধূসরিত রাস্তাগুলো থেকে উৎসারিত ধূলি কমে গিয়েছিল। ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ ও শব্দদূষণ যথেষ্ট কমে গিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবারও মানুষের জীবনযাত্রা এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসার কারণে নতুন করে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে পরিবেশ, বায়ু এবং শব্দদূষণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণের কারণে প্রথমেই প্রভাব পড়ে শ্বাসযন্ত্রের উপরে। দূষিত বায়ুর কণা এতোটাই ক্ষুদ্র যে এটি সহজেই মানুষের চোখনাকমুখ দিয়ে ঢুকে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং ফুসফুস, হার্ট, কিডনি, লিভার ইত্যাদি আক্রান্ত করে থাকে। বায়ুদূষণে দেশের এমন দুঃসহ পরিস্থিতি হওয়া সত্ত্বেও তেমন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। বায়ুদূষণ বর্তমানে একটি আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এই বিপর্যয় থেকে বাঁচতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বায়ুদূষণ রোধে প্রতিটি নাগরিককে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। তাঁরা বলেন, বায়ুদূষণ রোধে সরকারের তদারকি সংস্থাগুলোকে বায়ুদূষণের জন্য দায়ী প্রতিটি উৎসের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি দূষণের উৎসগুলো নির্মূলে উদ্যোগী হতে হবে। বায়ুর গুণগত মান উন্নত করতে চাইলে বায়ুদূষণের কারণগুলোর যথাযথ সমাধান যেমন জরুরি, তেমনি সাধারণ মানুষকেও সচেতন করে তুলতে হবে। কারণ, বিশুদ্ধ বাতাসের চাহিদা তো মানুষের অধিকার। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ বাতাস জরুরি। এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশুদ্ধ বাতাস যে আমাদের অধিকারএই বোধ সাধারণের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে