আদালত পাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিরা পুলিশের নজরদারির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশিদ। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মলনে তিনি এ দাবি করে বলেন, যে কোনো মুহূর্তে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
ঢাকা মহানগর মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আমরা সব জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, জঙ্গি ছিনতাইয়ে অংশ নেয় ১০ থেকে ১২ জন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
রোববার দুপুরে পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নেতা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা। সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশের দিকে স্প্রে মেরে তাদেরকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। শামীম ও সিদ্দিক প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলাতেও আবু সিদ্দিক সোহেলের ফাঁসির রায় হয়েছে। এ ঘটনায় ঢাকার পুলিশ কমিশনার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। সারা দেশে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় একটি মামলাও করেছে পুলিশ। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ জনকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
ওই মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে হারুন অর রশিদ বলেন, সবকিছু মিলিয়ে তদন্ত চলছে, আমরা মনে করি আসামিরা আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে।
এদিকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ ধরে হারুন বলেন, আসামিদের আনা নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে। তবে যে কারণেই হোক একটি ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, এ জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আদালতের পাশাপাশি সর্বত্রই বিশেষ টহল ও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আসামিদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আদালত পাড়ায় বাড়তি পুলিশের ব্যবস্থা পুলিশ কমিশনার করেছেন।
পাঁচ পুলিশ বরখাস্ত : দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন সিএমএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ এসআই নাহিদুর রহমান, আসামিদের আদালতে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফুল হাসান ও কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার।
ছিনতাই অপারেশনে অংশ নেয় ১০-১২ জন : দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় অংশ নিয়েছিল ১০-১২ জন। তাদের আশা ছিল জঙ্গি সদস্য আরাফাত ও সবুরসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মইনুল হাসান শামীম, আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নেওয়া। কিন্তু সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।
গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি সদস্যকে ছিনতাই অপরারেশনে নেতৃত্বদানকারীর নাম আমরা জেনেছি। অপারেশনের বেশ কয়েকজন সহযোগীকেও শনাক্ত করা হয়েছে। অপারেশনের পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছে তা-ও আমরা গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আপাতত তদন্তের স্বার্থে আমরা তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করছি না।
তিনি বলেন, অপারেশনে যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা সবাই আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার আস্কারি বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের সদস্য। নেতৃত্ব না দিলেও মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন তাকে আমরা শনাক্ত করেছি, কিন্তু নামটা আপাতত বলতে চাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যেকটি পয়েন্টে সতর্ক করে দিয়েছি। তারা যাতে সীমান্ত পাড়ি দিতে না পারে। কোনোভাবে যাতে বের হতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ছিনতাইয়ের মাধ্যমে জঙ্গিরা নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে কিনা বা অপারেশনে নতুন জঙ্গি সংগঠনের কোনো যোগসাজশ রয়েছে কিনা? এর উত্তরে আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনের কোনো হাত নেই। তবে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আনসার আল ইসলাম, জেএমবি, নিউ জেএমবি, হরকাতুল জিহাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোক নিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনের যোগসাজশ আমরা পেয়েছি।
পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটি : জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. মনজুর রহমান।