নগর বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু

থানা ও ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেয়া হবে আজ সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্বে কেন্দ্রীয় নেতা

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

তৃণমূলে দলকে ‘শক্তিশালী’ ও নেতাকর্মীদের ‘সুসংগঠিত’ করতে চট্টগ্রাম মহানগরে সাংগঠনিক পুর্নগঠন প্রক্রিয়া শুরু করছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে নগর বিএনপির আওতাধীন ১৫ থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হবে। আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে। এদিকে বিলুপ্ত করার পর থানা ও ওয়ার্ডে কাউন্সিলের মাধ্যমে করা হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সম্মেলন করা হবে নগরেও। এ কাউন্সিল ও সম্মেলন আয়োজনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানকে দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্র। ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে তাকে গত সপ্তাহে নির্দেশনাও দিয়েছে কেন্দ্র। অবশ্য ২০২২ সালেও সম্মেলনের মাধ্যমে নগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে আহমেদ আযম খানের নেতৃত্বে একটি তদারক ও একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। সেবারও ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁেধ দেয়া হয়। নির্ধারিত এ সময়ে একটি থানা ও ওয়ার্ডে সম্মেলন হয়নি।

নগর বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জুলাই এরশাদ উল্লাহকে আহ্বায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে মাত্র দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর প্রায় চার মাসের মাথায় গত ৩ নভেম্বর ৫৩ সদস্যে উন্নীত করা হয় এ আহ্বায়ক কমিটি। গত ১৫ নভেম্বর আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা হয়। এতে নগর বিএনপির আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এর অংশ হিসেবে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্তিরও সিদ্ধান্ত হয়। এরি মধ্যে ২৫ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব দেয়া হয় আহমেদ আযম খানকে। আগামী বৃহস্পতিবার নগরে আসার কথা রয়েছে তার। এদিকে আজ থানা ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ আজাদীকে বলেন, দলকে শক্তিশালী ও নেতাকর্মীদের সুসংঘটিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছ। বিগত সময়ে রাজপথে থেকে দলের ‘আন্দোলনসংগ্রামে’ যারা সক্রিয় ছিলেন, দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারাই পরবর্তী থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতৃত্বে আসবেন।

সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান আজাদীকে বলেন, সংগঠনকে পুর্নগঠনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেয়া হবে। পরবর্তীতে কীভাবে দলে আরো যোগ্য নেতৃত্ব আনা যায় সে পদক্ষেপ শুরু হবে। বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানকে কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনিও আসবেন। এরপর পরবর্তী কার্যক্রম আমরা শুরু করব।

এ বিষয়ে জানার জন্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের মোবাইলে চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

নানা উদ্যোগেও হয়নি সম্মেলন :

২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের নগর কমিটি করা হয়। তাদের তিন মাসের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করার নির্দেশনা ছিল। তারা থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুর্নগঠনের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্র। কিন্তু কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও পুর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। এরপর ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ১৫টি থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত দেন। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটিগুলো গঠনের নির্দেশনা দেন তিনি। এরপর একই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরের আহ্বায়ক, সদস্য সচিব এবং ১৩ জন যুগ্ম আহ্বায়কের সমন্বয়ে পৃথক ১৫টি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি থানা ও ওয়ার্ডে সংগঠনের সার্বিক অবস্থা সরেজমিন পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জমা দেন। তবে একই বছরের ২৯ মার্চ দলীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হন আহ্বায়ক। এতে বন্ধ হয় কমিটি পুর্নগঠন প্রক্রিয়া।

এরপর ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন জামিনে আসলে থানা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কমিটি গঠনের লক্ষ্যে প্রতিটি থানায় ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক কর্মী সমাবেশ শুরু হয়। হালিশহর এবং পাহাড়তলী ছাড়া বাকি ১৩ থানায় সমাবেশ শেষও করে। এ দুই থানায় কর্মী সমাবেশ শেষে একযোগে ১৫ থানায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার কথা ছিল। এ অবস্থায় অক্টোবর মাসে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আসে, থানা কমিটির আগে ইউনিট ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে ইউনিট কমিটি গঠনের আগে সদস্য সংগ্রহেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে জন্য একটি তথ্য সংগ্রহ ফরমও পাঠায় কেন্দ্র। এর প্রেক্ষিতে অক্টোবর মাসে থানা কমিটি গঠন স্থগিত করা হয়।

পরবর্তীতে আবারও ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রায় সবগুলো ওয়ার্ড প্রস্তুতও হয়। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ ও মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করে কেন্দ্র। তখন আটকে যায় ওয়ার্ড কমিটি গঠন।

এরপর ২০২২ সালের ২১ মার্চ নগরের আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে পৃথক পাঁচটি উপকমিটি করে দেন তারেক রহমান। গঠিত উপকমিটির তদারকির জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। এর প্রধান করা হয় অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানকে। উপকমিটি ও তদারক কমিটি উভয়কেই ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যে তাদের ৭৭০টি কেন্দ্র কমিটি (ভোট কেন্দ্র), ১৫টি থানা ও আওতাভুক্ত ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটি করতে বলা হয়। কিন্তু ব্যর্থ হয় তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে তিন মাদক কারবারির সম্পদ জব্দ করেছে দুদক
পরবর্তী নিবন্ধদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে রিট