সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নালা-নর্দমা, খালে ও পানি নিষ্কাশনের পথে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। খাল-নালায় ময়লা-আবর্জনা ফেলাকে ‘দণ্ডনীয় অপরাধ’ বলেও সতর্ক করেন তিনি। একশ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচির অংশ হিসেবে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা বিশেষ অভিযান উদ্বোধনকালে তিনি গত শনিবার এসব কথা বলেন। মেয়র বলেন, শহরটাকে সুন্দর করার জন্য একশ দিনে পরিকল্পনা নিয়েছি। আজকে তার সূচনা করলাম। তবে জনগণকে স্বস্তি দেয়া একশ দিন বেশি নয়। ধারাবাহিকতা থাকবে। আশা করছি, পাঁচ বছরের মধ্যে সবার সহযোগিতায় একটি পরিকল্পিত শহরে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, নগরীর অনেক রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ। শহরের অনেক রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। একশ দিনের মধ্যে তো নতুন করে রাস্তা নির্মাণ সম্ভব হবে না। তবে রিপেয়ার করে যান চলাচলের উপযোগী করা হবে। সে ব্যবস্থা আমরা করব। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সক্ষমতা, ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত, প্রকৌশলগত পরিকল্পনা প্রয়োজন। তাই ধৈর্য ধরতে হবে।
মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতাকে প্রথম অগ্রাধিকারের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, মশার বিস্তার নাগরিক দুর্ভোগ ও অস্বস্তির অসহনীয় উপসর্গ। তাই তা নিরসনে প্রথম ২০ দিনের মধ্যে সময় বেঁধে দিয়ে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হবে। তিনি অভিযানে স্বপ্রণোদিত হয়ে নগরবাসীকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন মশক নিধনের ওষুধ ছিটাবে এবং প্রকাশ্য স্থান ও নালা-নর্দমার স্তূপকৃত আবর্জনা, বর্জ্য পরিষ্কার করবে। কিন্তু শুধু এভাবে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা সম্ভব নয়। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা। নিজ গরজেই বাসা-বাড়িতে মশক প্রজনন ও উৎপত্তিস্থল বিনাশ এবং বর্জ্য-আবর্জনা সরিয়ে ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শহর পরিষ্কার রাখার কাজ শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। ১৭৬৯ সালেই সাউদ্যাম্পটন শহরে সপ্তাহে দু’দিন নগর কর্তৃপক্ষ রাস্তায় ঝাঁট দেবার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু তাতে সমস্যা মেটেনি। এই সব পরিষ্কারের কাজ হত সকালে, সারা দিনের রাস্তার বর্জ্য সেখানেই জমা হত, পথের ধারে কিছু বাড়ির নোংরাও ফেলা হত। এই অবস্থার সুরাহা করলেন এক ফরাসি আইনজীবী। এই আবিষ্কার এতই সহজ কিন্তু যুগান্তকারী যে এখন তার গুরুত্ব বোঝা কষ্টকর। এই ফরাসি মানুষটির নাম ইউজিন পোয়েবেল্লে। আইনজীবী পণ্ডিত মানুষটি পরে শাসনকার্যে যোগ দেন। তিনি সেইন-এর প্রিফেক্ট বা মেয়র ছিলেন। সেইন প্যারিসের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী। প্যারিস শহর ও কিছু অংশকে বলা হয় সেইন অঞ্চল। ১৮৮৪ সালের ৭ই মার্চ ইউজিন পোয়েবেল্লে নির্দেশ দিলেন যে প্রতিটি বাড়িতে তিনটি করে ৪০ থেকে ১২০ লিটারের পাত্র রাখতে হবে যাতে একটিতে থাকবে কম্পোস্ট করা যায় সে রকম বর্জ্য, অন্য দু’টির একটিতে কাগজ ও অন্যটিতে চিনা মাটির জিনিসপত্র। আজ থেকে ১৩৭ বছর আগে ইউজিন পোয়েবেল্লে বর্জ্য পৃথকীকরণ ও পুনশ্চক্রায়ন করার কাজ শুরু করে দিলেন। ব্যাপারটা তখনকার দিনে এতই অভিনব যে ওই বর্জ্য রাখার পাত্রগুলোর নাম হয়ে গেলো পোয়েবেল্লে। এখনও ফরাসিতে ডাস্টবিনকে বলা হয় পোয়েবেল্লে। এই সময় থেকেই প্যারিসে রাস্তায় দেখা গেল পোয়েবেল্লেদের।
সিটি করপোরেশন দফায় দফায় উচ্ছেদ অভিযান চালালেও আবারো অনুমোদনহীন বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে যায় নগর। বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠান উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও গলিপথে এসব ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়। সিটি করপোরেশনের কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নামে এসব ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়ে থাকে। সড়কের সৌন্দর্য রক্ষা করা সবারই দায়িত্ব। সবাই মিলে যদি সড়কের যেনতেন ব্যবহার করি তাহলে কেবল একটি কর্তৃপক্ষ কখনো সড়ক পরিচ্ছন্ন রাখতে পারবে না। আমরা যদি প্রত্যেকে নাগরিক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হই, তাহলে শহর পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হবে। যততত্র আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেললে শহরের সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন থাকবে।