নগর ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল

চকবাজারে সংঘর্ষের ঘটনা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৪ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৩৫ পূর্বাহ্ণ

নগরের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের এক ছাত্রকে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনার দ্বিতীয় দিনেও উত্তেজনা কমেনি দুই সংগঠনইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলে। আরিফুল ইসলাম নামে ওই শিক্ষার্থীকে ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ দাবি করে ছাত্রদলের পুলিশের সোপর্দ করা নিয়ে সোমবার রাতভর দুই সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় পরষ্পরকে ‘দোষারোপ’ করা। এদিন চকবাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে আগের রাতের ঘটনার জন্য ছাত্রদল দায়ী করে ছাত্রশিবিরকে। একইদিন ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে ছাত্রদলকে দোষারোপ করে। এরই ধারবাহিকতায় গতকাল বুধবার বাদ জোহর চকবাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রশিবির। মিছিল থেকে ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ ‘ছাত্রলীগের চেয়েও ছাত্রদলের করুণ পরিণতি হবে’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে।

চাঁদাবাজি, আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন, ছাত্রশিবিরের কর্মী ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে’ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলটি আয়োজন করা হয় ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর এর ব্যানারে। এতে মহানগর দক্ষিণসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। কাপাসগোলা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে অলিখাঁ মসজিদের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর সেক্রেটারি মুমিনুল হক মুমিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েল ও চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি।

তানজীর হোসেন জুয়েল বলেন, গতকাল আমরা দেখেছি ছাত্রদলের ব্যানারে টোকাই এবং সন্ত্রাসীদের একটা মিছিল হয়েছে। সেদিন তারা স্লোগান দিয়েছিলো ‘জামাতশিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, আরেকটি স্লোগান দিয়েছিলো ‘একটাদুইটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’। এটা কাদের স্লোগান, আপনারাতো জানেন। এ স্লোগান যারা দিতো, তারা আছে কোথাও? যারা আমাদের বাংলা ছাড়তে বলতো, তারা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এ স্লোগান দিয়ে যারা নব্য ফ্যাসিবাদের পরিচয় দিতে চাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাইছাত্রলীগের চেয়ে করুণ পরিণতি আপনাদের হবে। ব্যবসায়ী ভাইদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাইআমরা যদি আমাদের জায়গা থেকে প্রতিবাদ করি, চাঁদাবাজের শিকড় আমরা উপড়ে ফেলতে পারবো।

তিনি বলেন, বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদীরা যে স্লোগান দিয়েছিল, গতকাল ছাত্রদল একই স্লোগান দিয়ে নব্য ফ্যাসিবাদের পরিচয় দিয়েছে। সারাদেশে চাঁদাবাজি করে ব্যবসায়ী ভাইদের বিরক্ত করে তুলেছে। ২১ তারিখে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় আমাদের ভাইদের ওপর দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে।

ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, জুলাই বিপ্লব শুধুমাত্র ৩৬ দিনের জুলুমনির্যাতনের কারণে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়নি, বরং বিগত সতেরো বছরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ছাত্রজনতা একটি সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ছাত্রদল নামক সংগঠন চাঁদাবাজিকে তাদের ক্রিয়েটিব কাজে পরিণত করেছে। দুই দিন আগে চকবাজারে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়ে আমাদের ভাইদের রক্তাক্ত করেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, ারা এ গুলি কোথায় পেয়েছে? শীঘ্রই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

তিনি বলেন, বীর চট্টলায় ইসলামী আন্দোলনের শিকড় অনেক গভীরে। ছাত্রশিবিরকে টার্গেট করলে তোমাদেরকে কঠিন পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি চাঁদাবাজি রুখতে ছাত্রজনতা, ব্যবসায়ী, দোকানি সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরএর সাংগঠনিক সম্পাদক খুররম মুরাদ, অর্থ সম্পাদক গোলাম আজম, অফিস সম্পাদক আরফাত হোসেন, প্রচার সম্পাদক সিরাজী মানিক।

উল্লেখ্য, গত সোমবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে আরিফুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীকে চাকবাজার থানায় সোপর্দ করে মহসীন কলেছ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তবে আরিফকে নিজেদের কর্মী দাবি করে ছাত্রশিবির। পরে তাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় যায় ছাত্রশিবিরের নেতকর্মীরা। পরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

চট্টগ্রাম কলেজে মানববন্ধন : ছাত্রদলের মিছিল থেকে চট্টগ্রাম কলেজে প্রবেশের চেষ্টার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম কলেজে মানববন্ধন হয়েছে। চট্টগ্রাম কলেজ সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে দাবি করা হয়, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রদল কর্তৃক বহিরাগত অছাত্রদের মিছিল নিয়ে কলেজের গেইট ভেঙে প্রবেশ করে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের এমডিসহ ১৩ জনকে শোকজ
পরবর্তী নিবন্ধনগরীর ছয় এলাকা চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে