নগর গণপরিবহন ব্যবস্থায় অনন্য মাইলফলক

| বৃহস্পতিবার , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে মেট্রোরেল যুগে। নগর গণপরিবহন ব্যবস্থায় অনন্য মাইলফলক। বিশ্বে আধুনিক নগর যোগাযোগ ব্যবস্থায় অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ মেট্রোরেল। লন্ডনে সর্বপ্রথম এই রেলব্যবস্থা চালু হয়। এবার তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা ও নতুন স্বপ্নের সূচনা হয়েছে রাজধানীতে। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ‘উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল লাইনটি এমআরটি ৬ নামে পরিচিত। উভয় দিকের চব্বিশটি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ৬০,০০০ যাত্রী এবং দিনে ৫০০,০০০ যাত্রী বহন করতে পারবে। প্রতিটি ট্রেনে ৬টি কোচ আছে, যা ভবিষ্যতে আপ গ্েরড করা যেতে পারে এবং প্রতিটি ট্রেন সর্বাধিক ২৩০৮ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছানো যাবে মাত্র ৪০ মিনিটে, যা যানজট কমাবে এবং কর্মঘণ্টা ও সময় বাঁচাবে। মেট্রোরেল সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক হওয়ায় পরিবেশদূষণ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’ আসলে প্রায় দুই কোটি লোকের ঢাকা শহরে একটি অভিযোগ ছিল, গণযোগাযোগব্যবস্থা বলতে এখানে তেমন কিছুই নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এক কোটি লোকের বাস, এ ধরনের শহরগুলোকে নগরবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় বলা হয়ে থাকে ‘মেগাসিটি’। সারা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে প্রায় ৩৫টি এ ধরনের মেগাসিটি রয়েছে। ঢাকার অবস্থান পঞ্চম বা ষষ্ঠ। এর মধ্যে ঢাকা সম্ভবত পৃথিবীর হাতে গোনা দুএকটি মেগাসিটির একটি, যাতে কিনা এত দিন পর্যন্ত কোনো মেট্রোরেল আর সাবওয়ে সিস্টেম বা পাতালরেল ছিল না। পাতালরেল আসতে সময় লাগবে আরও এক দশক হয়তো বা, তবে মেট্রোরেল আমরা পেয়ে গেছি!’ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী মাসেই বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিলাম। বর্তমান সরকার সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৬টি মেট্রোরেল লাইনের সমন্বয়ে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় ৪টি মেট্রোরেল লাইনের নির্মাণ বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে এবং ২টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সবার জন্য মেট্রোরেলএই স্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকা মেট্রোরেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য উন্নত বিশ্বের ন্যায় প্রয়োজনীয় সকল সুবিধাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মেট্রোরেলে মহিলা যাত্রীদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি মেট্রো ট্রেনে একটি স্বতন্ত্র মহিলা কোচ রাখা হয়েছে।

পত্রিকান্তরে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, মেট্রোরেল ঢাকার বাসিন্দাদের বহুমুখী সুবিধা দেবে। সেগুলো হলো : এটি ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের যানজট থেকে মুক্ত করবে, এতে মহানগরীর বাসিন্দাদের মূল্যবান সময় বাঁচবে, যাত্রা হবে খুবই আরামদায়ক ও নিরাপদ, যাত্রীরা খুবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। ট্রেনটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত, নগরবাসী স্বল্প সময়ে এবং কম ভাড়ায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে, যাত্রীদের ট্রেনের জন্য স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না, ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ থাকবে না ভাড়া ছাড়া যা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, মেট্রোরেলের প্রতিটি কোচ সুসজ্জিত, আরামদায়ক এবং অত্যাধুনিক, যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়ও মেট্রোরেলে খুব আরামদায়ক ভ্রমণ করতে পারবেন, প্রতিটি মেট্রোরেল স্টেশন হবে অত্যাধুনিক এবং প্রশস্ত যেটা জনাকীর্ণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

দৈনিক আজাদীতে ২৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, চট্ট গ্রামেও হবে মেট্রোরেল। এ সংবাদ চট্টগ্রামবাসীর জন্য বড় সুখবর। সংবাদে বলা হয়েছে, ঢাকার পাশাপাশি বন্দর নগরী চট্ট গ্রামেও মেট্রোরেল করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। এর দশমাস পর গত ২১ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য মোট ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা থেকে ৫৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

চট্ট গ্রাম মেট্রোপলিটন এরিয়ার জন্য ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ‘ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রো রেল ট্রানজিট কন্সট্রাকশন অব চিটাগাং মেট্রোপলিটন’ এরিয়া শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে একনেকে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মেট্রোরেল শুধু ঢাকাতে থাকবে কেন, চট্ট গ্রামের জন্যও মেট্রোরেল প্রকল্প নিতে হবে। যেসব শহরে এয়ারপোর্ট আছে, সেসব শহরে পর্যায়ক্রমে সংযুক্ত করে প্রকল্প নিতে হবে। তিনি বলেন, অন্যান্য শহরগুলোতে মেট্রোরেল করতে না পারলেও মেট্রোরেলের মতো অন্য সার্ভিস চালু করতে হবে।

আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকায় যুক্ত হলো নগর যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ মেট্রোরেল। আগামীতে চট্টগ্রামেও আসবে। আমরা একটার পর একটা এমন অনন্যসাধারণ কর্মযজ্ঞের জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে