নগর উন্নয়ন নিয়ে ধারাবাহিক পরিকল্পনা থাকা উচিত

| বুধবার , ১ জুন, ২০২২ at ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী চসিকের বর্তমান পর্ষদের ১৬তম সাধারণ সভায় নানা বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, জোন ভাগ করে দেয়ার পরও সুপারভাইজারদের অবহেলার কারণে এখনো নগরীতে ময়লার স্তূপ দৃশ্যমান, যা কোনো অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না। তিনি মশক নিধনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। তাই এখন থেকে মশার ওষুধ ছিটানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কাজের মাধ্যমে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা হবে। এছাড়া আগামী ১০ দিনের মধ্যে নগরের সবগুলো খাল ও নালার বাঁধ অপসারণ করে পানি চলাচলের প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সিটি মেয়র বলেন, বাঁধগুলো সরিয়ে বৃষ্টির পানি চলাচলের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও সিডিএকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তারা বাঁধ অপসারণ করেনি। যে কারণে কয়েকদিন আগে এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বহদ্দারহাট, মুরাদপুরসহ অনেক এলাকায় জলজট হয়েছে। নাগরিক ভোগান্তি হয়েছে। এটা দুঃখজনক।

এ কথা সত্য যে, উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামে বিশেষ বরাদ্দ ও নানা প্রকল্প দেওয়া হলেও চট্টগ্রামের জনদুর্ভোগের শেষ হচ্ছে না। সমন্বয়হীনতা, সঠিক সময়ে কাজ শেষ না করা, অনেক কাজ শুরু করে যথাসময়ে শেষ করতে না পারা ইত্যাদি নানা সীমাবদ্ধতায় বিদ্যমান নাগরিক সমস্যা লাঘব হচ্ছে না। ফলে উন্নয়নের মহাসড়কে চট্টগ্রামের গতিবেগও বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বরং জলাবদ্ধতা ও যানজটে থমকে থাকছে মহানগরী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, একবিংশ শতাব্দীর উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ নগরীকে থমকে রাখলে চলবে না। উন্নয়নের মহাসড়কে তীব্র গতিবেগে চলতে হবে। পত্রপত্রিকায়, গোল টেবিল বৈঠকে কিংবা নানা বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় নাগরিক সমস্যাগুলো অতি দ্রুত দূরীভূত করে উন্নয়নে গতিবেগ সঞ্চারের প্রণোদনাই উচ্চারিত হয়েছে বারবার। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজ করবার একটি পথও দেখানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় নগর। দেশের বৃহত্তম বন্দর চট্টগ্রামে। যে কারণে চট্টগ্রামকে বলা হয় বন্দরনগরী। বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। এই বন্দরকে বাঁচাতে হলে চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনও বিকল্প নেই। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে চট্টগ্রাম দ্রুত এগিয়ে যাবে। দেশেরও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। সমস্যা যেখানে সমাধানও সেখানে। দেশের উন্নয়নে চট্টগ্রাম এখন মাইলফলক। প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সঠিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলে চট্টগ্রাম হবে সত্যিকার অর্থে আধুনিক নগরী।

আমরা জানি, সিটি মেয়রের স্বপ্ন হলো পরিকল্পিত নগরী। কিন্তু তিনি কতোটা পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন! বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘আরবান ডিজাইন, ল্যান্ডস্কেপিং কিংবা প্ল্যানিং না থাকলে নগরকে এই লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। সেখানে মেয়রের সক্ষমতা বের করতে হবে।’ সরকার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দিচ্ছে, বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এটা যেন বৃহৎ জনগণের স্বার্থ ও প্রত্যাশাকে স্পর্শ করতে পারে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, মেয়র ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পরিকল্পনা পাস করে ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়ে থাকে কখনো কখনো। তবে সিডিএ ব্যর্থ হলে সিটি মেয়রকে এগিয়ে আসতে হবে। যেমন একটা হাসপাতাল করলে নিচে ৫০ শতাংশ খালি জায়গা রাখতে হবে। যে ছাড়বে না, তাকে যেন ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া না হয়। তা ছাড়া নগরের নানা স্থানে, বিশেষ করে ব্যস্ত এলাকায় ফুটপাতগুলো বেদখলে আছে। হাঁটাচলা করা যায় না। কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় এই ফুটপাত দখল হয়। হকাররা বসে থাকে। এ রকম অনেক বিড়ম্বনা আছে। নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও নগরকে বাঁচিয়ে রাখতে মেয়রকে শক্ত ও দৃঢ় হয়ে কাজ করতে হবে। মোট কথা, নগরের সবকিছু নিয়ে ৫ বা ১০ বছরের ধারাবাহিক পরিকল্পনা থাকা উচিত। আমরা জানি, সিটি মেয়র শতভাগ সেবার মানসিকতা নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানেন, চট্টগ্রাম এগোলে বাংলাদেশ এগোবে। চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। চট্টগ্রাম সমৃদ্ধ করতে তাঁকে সবার সহযোগিতাও করা উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিউনিসিয়ার স্বাধীনতা দিবস
পরবর্তী নিবন্ধতফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া : বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক