চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরীর উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। গতকাল রোববার চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সিডিএর হলরুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল করিম।
সিডিএর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের আলোকে ‘মহানগরের উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি’ বিষয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সিডিএ বোর্ড সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ এস এম জাইদুল করিম, প্রকৌশলী মানজারে খোরশেদ আলম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ কুদরত আলী, মো. নজরুল ইসলাম, স্থপতি সৈয়দা জারিনা হোসেন ও স্থপতি ফারুক আহমেদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম এবং সিডিএর সচিব রবীন্দ্র চাকমা, প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। সভায় সিডিএর ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের’ ওপর বিস্তারিত বলেন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবু ঈসা আনছারী। তিনি প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের পুকুর, খাল, পাহাড়সহ পরিবেশগত দিকগুলোর সংরক্ষণে সিডিএ ও চসিকের কাজের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সিডিএ বাস্তবায়নাধীন ‘চট্টগ্রাম শহরের খাল সংস্কার ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প’–এর পরিচালক প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান কার্যক্রম বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে খাল পরিষ্কারের টেকসই কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন এবং আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ও খাল পুনঃভরাট প্রতিরোধে চসিকের সহযোগিতা কামনা করেন।
সিডিএর বোর্ড মেম্বার স্থপতি সৈয়দা জারিনা হোসেন মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের সাথে সাথে তার সঠিক বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন। সিডিএর লোকবল সংকট এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তা সমাধানে বোর্ড মেম্বার প্রকৌশলী মানজারে খোরশেদ আলম মত দেন।
প্রধান অতিথি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রামকে প্রকৃত অর্থে গ্রিন, ক্লিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আন্তঃকর্তৃপক্ষ সমন্বয় ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। নগরীর পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভূমিকা উল্লেখ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের মাধ্যমে সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের জন্য তিনি সিডিএর সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া নগরবাসীর মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে এ স্থানগুলোর সুরক্ষা এবং উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, নগরীর মূল সমস্যা জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনে জনসচেতনতা প্রয়োজন। আমি বিদেশে গেলে ওই শহরটা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি, কিন্তু একই মানুষ আমি যখন নিজের দেশে ফিরি তখন আর তা করছি না। এজন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রোগ্রাম এখন স্কুল লেভেল থেকে শুরু করছি। গতকাল চট্টগ্রামের চাইল্ড স্পেশালিস্টদের একটি দলের সাথে কথা বলেছি। তারা ইন্টারেস্টেড এই প্রোগ্রাম চালানোর জন্য। আমরা বাচ্চাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে তা ধীরে ধীরে সমাজে বড় প্রভাব ফেলবে।
সিটি মেয়র বলেন, গত ১৮ বছর আমি এই মহানগরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। পরে সভাপতি ছিলাম। এরপর আহ্বায়ক ছিলাম। যার কারণে প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে আমাদের নেতাকর্মী আছেন এবং আমার সাথে তাদের সম্পর্কটা খুবই ভালো। পাশাপাশি সেখানে কিন্তু ওয়ার্ড পেশাজীবীরা আছেন। মহল্লা সর্দার আছেন এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দও আছেন। তাদের সাথে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে। তাদের নিয়ে যদি কমিটি গঠন করি, তাহলে তারাও গণসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম গড়তে ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রতিটা ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে প্রায় ৭০, ৮০, ৯০ জন আছেন। আমি অলরেডি ওয়ার্ড ওয়ার্ডে গিয়ে তাদেরকে মনিটরিং করছি, তাদের রোল কল করছি। জনগণকে জিজ্ঞেস করছি, এসব লোক কাজ করছে কিনা। মশা মারতে আরো আধুনিক কোনো ঔষধ আনা যায় কিনা তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক আবু ঈসা আনছারীর সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন এলাকার আয়তন বৃদ্ধির প্রস্তাবে সমর্থন করেন তিনি। তিনি সিটি কর্পোরেশনের পরিষেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরও প্রায় ২৪ লাখ মানুষকে এই সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।
মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সাধারণ জনগণের উপস্থিতি নিশ্চিতে ওয়ার্ডের মহল্লা কমিটি, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সহায়তা গ্রহণে সহযোগিতা করবেন মর্মে আশ্বস্ত করেন। মেয়র বলেন, সিডিএ ও চসিকের মধ্যে কোনো বিভেদ রাখা যাবে না। চট্টগ্রাম উন্নয়নের স্বার্থে তা ভবিষ্যতে আর হবে না।
সভাপতির বক্তব্যে সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল করিম এই মতবিনিময় সভাকে আন্তঃকর্তৃপক্ষ সমন্বয়ের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মাস্টার প্ল্যান প্রকল্প বাস্তবায়নে তথ্য ও সম্পদের অবাধ বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।