নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন জুনে

চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ স্বপন।। নগরীর ১৫ থানা তদারকিতে ১৫ সাংগঠনিক টিম

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৩ মার্চ, ২০২২ at ৮:১২ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে ঈদের পরে জুনে নেত্রীর সুবিধা মতো একটি তারিখে নগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল করার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
তিনি জানান, ঈদের পরপরই মহানগর আওয়ামী লীগের অসম্পন্ন ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন করার সিদ্বান্ত গ্রহণ করেছি। আজকে সাংগঠনিক টিম ভাগ করে দিলাম। এখন একদিনে ১৫টি ওয়ার্ড সম্মেলন করতে সমস্যা নেই। একই দিনে ১৫টি ইউনিট ও থানা সম্মেলন করতে সমস্যা নেই। একই দিনে একাধিক থানা সম্মেলন করতেও সমস্যা নেই। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নগরীর ১৫ থানার সাংগঠনিক টিমের প্রধানের সঙ্গে সভা শেষে হুইপ আবু সাঈদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সামনে বর্ষা। আগস্টে আমরা কোনো সম্মেলন করি না। সেজন্য আমাদের টার্গেট হচ্ছে আমরা জুনের মধ্যে সম্মেলন শেষ করতে চাই। যদি কোনো দৈব দুর্বিপাক না ঘটে, করোনার সংক্রমণ বা অন্য কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে উনারা (সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা) আমাদের কথা দিয়েছেন সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন এবং সম্মেলনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
হুইপ বলেন, আমরা সকালের সেশনে এই মিটিংয়ে ১৫টি থানার সাংগঠনিক কার্যক্রম তদারকির জন্য ১৫টি সাংগঠনিক টিম গঠন করেছি। সাংগঠনিক টিমের প্রধানদের নাম অনুমোদন করেছি। বিকেলে আবার সেই টিমের প্রধানদের নিয়ে মিটিং করলাম। সেই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামীকাল (আজ বুধবার) সন্ধ্যায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, আ জ ম নাছির, রেজাউল করিম চৌধুরী, সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বসে এই সাংগঠনিক টিমকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেবেন। প্রত্যেকটি সাংগঠনিক টিমে মহানগর আওয়ামী লীগের জীবিত ৬২ জন সদস্য আছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাদে বাকি ৬০ জনকে ৪ জন করে ১৫টি সাংগঠনিক টিমে ভাগ করে দেওয়া হবে। এই টিম সংশ্লিষ্ট থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বা যুগ্ম আহ্বায়ক, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলনের ব্যবস্থা করবেন।
আবু সাঈদ চৌধুরী স্বপন বলেন, ইতোমধ্যে কিছু ইউনিট সম্মেলন শেষ হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের কাছে কিছু অভিযোগ দাখিল হয়েছিল। সাংগঠনিক টিম বসে সেই অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করে সেখানে অনিয়ম বা ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা সেইগুলো দেখবেন এবং আলোচনা করবেন এবং সেটা সমাধানের চেষ্টা করবেন। যদি তারা সমাধান করতে না পারেন, তাদের সুপারিশমালা প্রণয়ন করে আমাদের মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিম বা আমাদের কাছে প্রেরণ করবেন। আমরা সেইগুলো মহানগর আওয়ামী লীগকে নিয়ে বসে আলোচনা করে সমাধান করব। এজন্য আমরা এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছি। ঈদের পরে মহানগরে যে সমস্ত ইউনিট সম্মেলন হয়নি, সে সমস্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন সম্পন্ন করব। মাননীয় নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে আগামী জুন মাসে মাননীয় নেত্রীর সুবিধা মতো একটি তারিখ নির্ধারণ করে মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সম্পন্ন করতে চাই।
হুইপ স্বপন বলেন, এই সাংগঠনিক টিমগুলো ইউনিট সম্মেলনের অনিয়ম দেখবেন, তেমনিভাবে আগামীতে সদস্য সংগ্রহ, নবায়ন কার্যক্রম তদারকি করবেন। মহানগর নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে তারা ঢাকা থেকে সদস্য সংগ্রহ ফরম এনে ফরমগুলো ইউনিট পর্যায়ে বিতরণ করবেন।
তিনি বলেন, আমরা সমাজের বিভিন্ন স্থানের ভালো মানুষদের আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত করতে চাই। নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত করতে চাই। যাদের বিরুদ্ধে সমাজে কোনো নেতিবাচক কথা নেই, যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থেকে নাশকতা করেনি বা কোনো ধরনের অপরাধ করেনি। সমাজে গ্রহণযোগ্য সকল মানুষকে আমরা আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত করতে চাই। যাতে করে আবর্জনা প্রবেশ করতে না পারে। সেই কারণে আমাদের সাংগঠনিক টিমের বিচক্ষণ নেতৃবৃন্দ তাদের প্রজ্ঞা, মেধা দিয়ে কাজ করবেন। তাদের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। তারা চট্টগ্রামে অনুবেশকারী বা খারাপ মানুষকে আওয়ামী লীগে স্থান দেবেন না। ভালো মানুষদের দিয়ে আওয়ামী লীগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস ছবুুর, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন প্রমুখ।
এর আগে সকালে থিয়েটার ইনস্টিটিউটে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। এ সময় তিনি বলেন, নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন কীভাবে কোন পদ্ধতিতে কবে নাগাদ করতে পারি এবং সুষ্ঠ সুন্দর স্বতঃস্ফূর্তভাবে সকলের অংশগ্রহণে করতে পারি তা ঠিক করতে আমরা আজ নগর আওয়ামী লীগের এ সভায় বসেছি। এই জনপদের আন্দোলনের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানকার নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ বিষয়ে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাই তা ঢাকা থেকে চাপিয়ে না দিয়ে উনাদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে চাই। চট্টগ্রামের সমস্যা চট্টগ্রামের নেতৃত্ব খুব ভালো জানেন। উনারা অনেক ত্যাগ, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ পর্যায়ে এসেছেন। এই নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে নগর আওয়ামী লীগে নতুন প্রাণের সঞ্চার হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, আমাদেরকে শুধু নেতা হওয়ার জন্য নয়, সংগঠনের অস্তিত্ব বজায় রাখতে নিজেদের সকল সামর্থ্য, শক্তি উজাড় করে দিতে হবে। আমি কার ছেলে বা আমার পৈতৃক পরিচয় কি তা কখনো নেতৃত্বের মাপকাঠি হতে পারে না। আমাদের মধ্যে নানারকম তর্ক-বিতর্ক ও মতভিন্নতা থাকতেই পারে। কিন্তু এ নিয়ে চরিত্র হরণ বা কোন্দল কিছুতেই কাম্য হতে পারে না।
মহানগর সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন বলেন, যারা দলীয় মঞ্চে পদ-পদবিধারী হয়ে কথা বলছেন তাদেরকে জেনে-শুনে-বুঝে কথা বলতে হবে। শুধু কিছু বলতে হবে বলেই প্রমাণপত্র ও যুক্তিহীনভাবে মুখরোচক বক্তৃতার খৈ ফুটিয়ে নিজেকে ফোকাস করাটা আদর্শিক দায়বদ্ধতা হতে পারে না।
তিনি বলেন, সদস্য নবায়ন বা তথ্য ফরম বিলি-বন্টনের ব্যাপারে যে কথাগুলো উঠেছে তার প্রকৃত জবাব হচ্ছে, এগুলো বিতরণ করা হয়েছে থানা, ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়কের মাধ্যমে। এককভাবে কাউকে দেওয়া হয়নি। কাদেরকে এই তথ্য ফরম কিভাবে ক’খানা দেওয়া হয়েছে তার পরিসংখ্যান দলীয় কার্যালয়ে আছে। অভিযোগকারীরা কি তা জানেন? ইউনিট সম্মেলন এবং যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এই কার্যক্রম আমরা ধারাবাহিকভাবে চলমান রেখেছি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দলের নেতৃস্থানীয় অংশের কেউ কেউ কেন্দ্রে কল্পিত অভিযোগ করে এই কার্যক্রমকে স্থবির করে দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তব সত্য হচ্ছে, আমরা শতাধিক ইউনিট সম্মেলন ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি। দু-একটি ইউনিটের ক্ষেত্রে যে অভিযোগ উঠেছে তার জন্য দায়ী হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারাই। তার জবাব দেবেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক নন, যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাই।
সকালে বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর সবুর, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার ও ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ এমপি, বদিউল আলম, আবদুচ ছালাম, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, শফিকুল ইসলাম ফারুক, সৈয়দ হাসান মাহমুদ শমসের, অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, হাজী মো. হোসেন, হাজী জহুর আহমেদ, জোবায়রা নার্গিস খান, আব্দুল আহাদ, আবু তাহের, ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, শহিদুল আলম, জহর লাল হাজারী, ড. নেছার উদ্দীন মঞ্জু, আহমদ ইলিয়াছ প্রমুখ।
আরো বক্তব্য দেন নুরুল আবছার মিয়া, খলিলুর রহমান, সুলতান আহমদ চৌধুরী, হাজী সিদ্দিক আলম, হারুনুর রশিদ, ফিরোজ আহমেদ, জাহাঙ্গীর চৌধুরী, মো. মমিনুল হক, মো. ইসহাক, কাজী আলতাফ হোসেন, এএসএম ইসলাম, মো. ইলিয়াছ, হাজী আবু তাহের ও মো. মঈনুদ্দীন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাম তেলের দাম কমল লিটারে তিন টাকা
পরবর্তী নিবন্ধবান্ধবীর সঙ্গে প্রেম নিয়ে দুই গ্রুপে হাতাহাতি