পহেলা ফাল্গুন কাল। ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে অনেক তরুণ–তরণী বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি–শাড়ি পরে দিনভর আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে থাকেন। আবার একইদিন ভালোবাসা দিবসও। ভালোবাসা দিবসে প্রেমিক–প্রেমিকা ও দম্পতিরা লাল শাড়ি পাঞ্জাবি ও সেলোয়ার–কামিজ পরে দিনটি উপভোগ করে থাকেন। আর ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত – এই দুটো দিবসের প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে ফুল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বসন্ত উৎসবে সাধারণত গাঁদা ফুলের চাহিদাই বেশি থাকে। তবে এবার বসন্ত উৎসবের জন্য তেমন ফুলের অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। আগের বছরগুলোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের অনুষ্ঠানের জন্য অগ্রিম পাওয়া যেত। এ বছর আগের মতো তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে ভালো ফুলের বেচাবিক্রি হয়। বিশেষ করে ভালোবাসার প্রতীক লাল গোলাপের ভালো চাহিদা থাকে। আশা করছি, এ বছর বসন্ত ও ভালেবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামের যত ফুলের দোকান আছে তার অর্ধেকই ফুলের ডিপো খ্যাত চেরাগি পাহাড় এলাকায়। এখানে ফুলের দোকান আছে ২৫টি। এছাড়া আগ্রাবাদ সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট এলাকায় আছে ১২টি। বাকি দোকানগুলো নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়ানো ছিটানো। চকবাজার, প্রবর্তক মোড়, দুই নম্বর গেট, দামপাড়া এম এম আলী রোড নার্সারি এলাকা, জিইসি মোড়, বহদ্দারহাট ও অঙিজেন মোড় অন্যতম। সবমিলিয়ে নগরীতে ফুলের দোকান আছে প্রায় ৭০টি। এসব দোকানের ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫ কোটি টাকার ফুলের সংগ্রহশালা নিয়ে এসেছেন। এছাড়া সিংহভাগ দেশি ফুল এসেছে যশোর, চূয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ এবং রংপুর থেকে। স্থানীয়ভাবে কঙবাজারের চকরিয়া থেকেও প্রচুর পরিমাণে ফুল এসেছে।
ফুলের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিটি দেশি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকায়, চীনা গোলাপ ১৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক ১০ থেকে ১৫ টাকা, জারবেরা ২০ থেকে ২৫ টাকা, গাঁদা ফুল লহর ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চন্দ্রমল্লিকা স্টিক ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, প্রতিটি দেশি গ্লাডিওলাস ২৫ থেকে ৩০ টাকা, প্রতি বান্ডেল চীনা জিপসি ফুল ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, দেশি জিপসি ফুল ২০ থেকে ৪০ টাকা এবং গাঁজরা ফুল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়।
ফুলের দোকানে আসা তরুণীরা জানান, ফুল এখন আর সৌখিনতার বস্তু নয়। ফুলের আদান–প্রদানের মাধ্যমে পারস্পরিক বিশ্বাস, প্রতিশ্রুতি, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এছাড়া নিজেকে সাজাতে ফুলের জুড়ি নেই। প্রেমিক যুগলের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি উপহার হলো ফুল। অন্যদিকে বসন্তে নানা বয়সী মেয়ে ফুলের রিং মাথায় পরে ঘুরে বেড়ায়। এছাড়া কানে দুল, গলায় মালা ও হাতে ফুলের বাহারি অলঙ্কার পরার পাশাপাশি চুলের এক পাশে তাজা ফুল পড়ে থাকেন তরুণীরা।
চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী ও চাষি বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. কুতুব উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতি বছর আমরা বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফুল নিয়ে আসি। বিগত বছরগুলোতে আমাদের বেচাবিক্রি বেশ ভালোই হয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে ভারত ও চীন থেকে ফুল আমদানি হচ্ছে। এখন আবার ফুলের আমদানি ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এক সময় থাইল্যান্ড থেকে ফুল আসত, এখন সেই বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশি ফুলের পাশাপাশি আমাদের এখানে প্রচুর দেশি ফুলের সমাহারও রয়েছে। আশা করছি–গত বছরের ন্যায় এ বছরও বেচাবিক্রি ভালো হবে।