নগরে সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দাবির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম পলিটেকনিকের ছাত্রদের মশাল মিছিল

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৮ আগস্ট, ২০২৫ at ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

ঢাকায় প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে নগরীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট মোড়ে শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ করেন।

এ সময় তারা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘২৪এর বাংলায়, ডিপ্লোমা কোটার ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, প্রকৌশল সমাজ জেগেছে’, ‘,,,৪ ডিপ্লোমা তুই কোটা ছাড়’সহ নানা রকম স্লোগান দেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকার ভুয়া ও মৃত উল্লেখ করে সরকারের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সড়কে গায়েবানা জানাজা পড়েন। পাশাপাশি নতুন করে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভের সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন নানা শ্রেণী পেশার নারীপুরুষ।

আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকায় সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অথচ আমাদের দাবি ছিল ন্যায্য। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছি। সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিতে আজকে (বুধবার) ঢাকার শাহবাগে জড়ো হয় চুয়েটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে আহত হয় অনেক শিক্ষার্থী। আমাদের মতে এই হামলার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের। যার কারণে এ সরকারের অকাল মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছি আমরা।

শিক্ষার্থীদের ঘোষিত ৫ দফা হচ্ছেস্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত এবং ন্যাক্কারজনক হামলার জন্য আন্দোলনকারীদের সামনে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চাইতে হবে এবং জবাবদিহিতা করতে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে ডিসি মাসুদকে বহিষ্কার করতে হবে। অনতিবিলম্বে তিন দফা দাবি মেনে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে, হামলায় আহত সকল শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারকে বহন করতে হবে এবং উক্ত আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সকল শিক্ষার্থীদের সুরক্ষ্মা নিশ্চিত করতে হবে, প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান রোকনের উপর হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে।

এদিকে চুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর দুই নম্বর গেট এলাকায় মশাল মিছিল করেন চট্টগ্রাম পলেটেকনিক ইনস্টিটিউটের শতাধিক শিক্ষার্থী। তারা বুয়েট, চুয়েটসহ বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শুরুতে যে তিন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল সেগুলোর প্রতিবাদ জানান এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দশম গ্রেড কোনোভাবেই হাতছাড়া হতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন।

প্রসঙ্গত, চুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গতকাল বেলা ১১টা থেকে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকার শাহবাগ অবরোধ করেন। পরে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিটিও প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বৈত নিয়ন্ত্রক কাঠামো, লাইটারেজ জাহাজ সেক্টরে অসম প্রতিযোগিতা
পরবর্তী নিবন্ধআমদানি বাড়ায় পাইকারিতে কমছে চালের দাম