নগরে মৌসুমী অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্য

প্রতিদিনই টার্গেট হচ্ছে সাধারণ মানুষ

ঋত্বিক নয়ন | শনিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে বিভিন্ন নামে সক্রিয় মৌসুমী অপরাধী চক্র। ছিনতাইকারী, টানা পার্টি, মলম পার্টি, গামছা পার্টি, অজ্ঞান পার্টির দলনেতা, হোতা গ্রেপ্তার বলা হলেও এসব অপরাধীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পারছে না পুলিশ। যার কারণে প্রতিদিনই সাধারণ মানুষ ছিনতাইকারী প্রতারকসহ বিভিন্ন অপরাধীদের টার্গেট হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে আহত হওয়ার ঘটনা অহরহ। রিকশা থেকে ছোঁ মেরে মোবাইল ও হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা নিত্যদিনের। টহল পুলিশের তৎপরতা কাগজেকলমে। যার ফলে এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। তবে পুলিশ বলছে রমজান উপলক্ষে এসব মৌসুমী অপরাধীদের প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি মাসেই গ্রেপ্তার হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক সদস্য।

সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, সাধারণত রমজানে মৌসুমি অপরাধীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তাই জনসাধারণের নিরাপত্তায় পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে ছদ্মবেশেও কাজ করছে পুলিশ। রয়েছে পুলিশের একাধিক টহল টিম। বড় অংকের আর্থিক লেনদেনে সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের মানি স্কট। জানা গেছে, রমজান উপলক্ষে নিরাপত্তার অংশ হিসেবে নগরীর ১৬ থানায় প্রতিদিন পুলিশের তিনটি টিম কাজ করছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থায়ী পিকেট ডিউটি, ফুট পেট্রোল ডিউটি ও হোন্ডা মোবাইল ডিউটি চলছে। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে একজন উপপরিদর্শক (এসআই) ও একজন সহকারী উপপরিদর্শকের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক নারী ও পুরুষ কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে থাকছেন প্রত্যেক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)। ১৫ রমজান পর্যন্ত এভাবে নিরাপত্তা বলয় থাকবে। এরপর নতুন করে আবারও ঢেলে সাজানো হবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কাজ করছে না। প্রতিদিনই নগরীর অলিগলিতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাইকারীদের হাতে আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। অস্ত্র ঠেকিয়ে বেশি ছিনতাই হচ্ছে। কখনও কখনও পরিচিত ব্যক্তির ভাব করে লোকজনকে থামিয়েও ছিনতাই হচ্ছে। ছিনতাইয়ের শিকার বেশিরভাগ মানুষই হয়রানি ও ঝামেলার আশঙ্কায় মামলা করেন না। ফলে ছিনতাইয়ের মামলা কম হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মামলা করতে গেলেও থানা তা নেয় জিডি হিসেবে। ফলে ছিনতাইয়ের প্রকৃত হিসাব পুলিশের কাছেও থাকে না। ইতোমধ্যে ছিনতাইকারীর তালিকা তৈরি করে অভিযানও শুরুর কথা বলা হলেও সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন থানায় যে ক’জন ছিনতাইকারী ধরা পড়েছে, তাদের অধিকাংশই নতুন কাজে যোগ দিয়েছে, তালিকায় তাদের নামও নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশ নগরীর ছিনতাইপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে, তালিকা ধরে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের অভিযান শুরু হলে ছিনতাইকারীরা পুরোনো এলাকা ছেড়ে নতুন এলাকা বেছে নেয়। ছিনতাইকারীদের অভিনব কৌশলের ফাঁদে পড়ে পুলিশের অভিযান ব্যর্থ হয়। ফলে ছিনতাই প্রতিরোধ কঠিন হয়ে পড়ে।

মাঝে মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন থানার ওসিসহ বিভিন্ন অফিসারেরা হারানো মোবাইল সেট খুঁজে বের করে মোবাইল ফোনের মালিককে হস্তান্তরের ছবি শেয়ার করে থাকেন। সম্প্রতি তেমনি একটি হারানো মোবাইল ফিরে পাওয়ার ব্যক্তি আজাদীকে বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে রাতে আমার মোবাইলটি চলন্ত বাসের জানালা দিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমি থানায় গেলে উনারা মামলা না করে জিডি করান। ক’দিন আগে মোবাইলে রাখা প্রযুক্তির সহায়তায় আমি জানতে পারি আমার মোবাইল সেটটি এই শহরেরই একটি স্থানে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিষয়টি জিডিতে উল্লেখ থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে একাধিকবার জানালেও তিনি খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান। পরে এক আত্মীয়ের সহায়তায় পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানোর দুইদিন পর আমার সেই মোবাইলটি উদ্ধার হয়। আমি থানায় গিয়ে আমার মোবাইল সেটটির ছিনতাইকারীর বিষয়ে জানতে চাইলে সেই অফিসার আমাকে বলেন, ছিনতাইয়ের নামও মুখে নিয়েন না। তাহলে এই জন্মে আর ফোন ফিরে পাবেন না। কোর্টে উকিল নিয়ে যেতে হবে। তার পর অনেক প্রক্রিয়ার পর সেটটি যে ফিরে পাবেন সেটা কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না। পরে হাসিমুখে আমার মোবাইল সেটটি তুলে দেয়ার ছবি তোলা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএমপির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মতে নগরীতে হরদম ছিনতাই হচ্ছে। মামলা না হওয়ায় থানা পুলিশ কিছুটা রিলাক্স মুডে আছে বলে জানান তিনি। আবার মামলা হচ্ছে যে কটি, তাও সঠিকভাবে মনিটরিংয়ের অভাবে বদলে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পুলিশের দায়িত্ব কেবল আসামি ধরা না। বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার একটা দায়িত্ব রয়ে যায়। তাছাড়া পুলিশের বদলির চাকরি। এটা মাথায় রেখেই বিশেষ বিশেষ মামলাগুলোর মনিটরিং ও দ্রুত চার্জশিট দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর চিরবিদায়
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় বাসের ধাক্কায় বাইক আরোহীর মৃত্যু