নগরে মশার হটস্পট ৪৯০টি

সর্বোচ্চ ৫২টি মোহরা ওয়ার্ডে ।। পাঁচলাইশসহ পাঁচ ওয়ার্ড ব্রিডিং পয়েন্ট মুক্ত চসিকের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ বিভাগের জরিপ

মোরশেদ তালুকদার | শুক্রবার , ৭ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

নগরে সর্বোচ্চ ৫২টি মশার প্রজননস্থল রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডটিসহ পুরো শহরে এমন হটস্পট রয়েছে ৪৩৩টি। চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত জরিপে এসব স্পট চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এমন এলাকাগুলোকে ভিত্তি করে আরো ৫৭টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়। অর্থাৎ মশার প্রজনন এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বিবেচনায় নগরে ৪৯০টি হটস্পট রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহী আজাদীকে বলেন, মশার প্রজননস্থলগুলোর মধ্যে অনাবাদি জমি, নালা ও ঝোঁপঝাড়, ডোবা, খাল, পুকুরজলাশয়, পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। হটস্পটগুলোতে কিটনাশক ছিটানোর ওপর জোর দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমি চসিকে যোগ দিয়েছি কয়েক মাস আগে। দায়িত্ব নেয়ার পর শহরের মশার প্রজননস্থলগুলো চিহ্নিত করার জন্য নিজ উদ্যোগে কাজ শুরু। নিজে মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে স্থানগুলো চিহ্নিত করি। প্রজননস্থলগুলোতে যদি আমরা কীটনাশক ছিটায় তাহলে মশার বংশবিস্তার অনেকটা কমে আসবে। বলা যায় প্রজননস্থলেই মশার লার্ভা ধ্বংস করলে মশা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। এতে শহরের মানুষ কিছুটা হলেও মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পাবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেঙ্গু শনাক্ত হিসেবে চিহ্নিত হটস্পটগুলোর বা যে ঘরে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে তার আশেপাশে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে।

কোন ওয়ার্ডে কয়টি : জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ২৫টি, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে ১৫টি, ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে ১৫টি, ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডে ৫২টি, ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে ২৯টি, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে ১৭টি, ৮ নম্বর শোলকবহর ওয়ার্ডে ৩০টি, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ১৩টি, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ৬টি, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ১৬টি, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে ১২টি, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ৩টি, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে ৭টি, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডে ৫টি, ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে ৯টি, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে ৭টি, ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ১৩টি, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডে ১২টি, ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডে ১৪টি, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে ৭টি, ২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে ৮টি, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে ২টি, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডে ১২টি, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে ১০টি, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে ১২টি, ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে ১৬টি, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে ৮টি, ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে ৩টি, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৫ নম্বর বঙিরহাট ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৭ নম্বর মুনিরনগর ওয়ার্ডে ৫টি, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ১টি, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডে ১৪টি, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ১৬টি এবং ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ৪টি মশার প্রজননস্থল রয়েছে। তবে ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ড, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, ৩৪ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড এবং ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙা ওয়ার্ডে কোনো ব্রিডিং পয়েন্ট নেই বলে জরিপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের ভিত্তিতে চিহ্নিত হটস্পটগুলোর মধ্যে রয়েছেআকবর শাহ হাউজিং, উত্তর কাট্টলী, কর্ণেল হাট, বিশ্বকলোনী, বাদামতলী, আলকরণ, কোতোয়ালী, মাদামবিবির হাট, সদরঘাট, পশ্চিম বাকলিয়া, পূর্ব বাকলিয়া, দক্ষিণ বাকলিয়া, দক্ষিণ খুলশী, পশ্চিম খুলশী, দক্ষিণ আগ্রাবাদ,উত্তর আগ্রাবাদ, বন্দর টিলা, চান্দগাঁও আবাসিক, নাছিরাবাদ প্রপার্টিজ, মেহেদীবাগ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, এনায়েতবাজার, গোয়ালপাড়া, কালির হাট, পূর্ব মাদারবাড়ী, পলোগ্রাউন্ড মাঠ সংলগ্ন এলাকা, সরাইপাড়া কাজিরদিঘী, শাপলা আবাসিক এলাকা হালিশহর, ঈদগাহ মুন্সিপাড়া, নাজিরপুলকলাবাগান ডবলমুরিং, কৈবল্যাধাম হাউজিং সোসাইটি, বায়েজিদ এলাকা, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, অঙিজেন, সিটি গেইট এলাকা, ফৌজদারহাট, চট্টগ্রাম কলেজ সংলগ্ন এলাকা, কাঠগড় মাইজপাড়া, বহদ্দারহাট ফরিদের পাড়া খাল ও আশেপাশের এলাকা, খতিববাড়ি খাল, কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকা, হিলভিউ আবাসিক এলাকা, হামজারবাগ কলোনী সংলগ্ন ফরেস্ট একাডেমি, সমবায় আবাসিক এলাকা, পাহাড়িকা আবাসিক এলাকা ও পূর্ব ষোলশহরের আমিন শ্রমিক কলোনি।

জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টম্বরে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল নগরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি স্থান চিহ্নিত করে তা চসিককে অবহিত করে। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে হালিশহর, আগ্রাবাদ, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডবলমুরিং এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকা।

এছাড়া একই বিভাগের শুরুতে পরিচালিত মশা জরিপে দেখা গেছে, নগরে মশার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে চসিকের উদ্যোগে ২০২১ সালে গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নগরের ৯৯টি স্থান পরিদর্শন করে ৫৭টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৩৩ স্থানে এডিস, ৩৯ স্থানে এনোফিলিস ও ২২ স্থানে এডিস ও এনোফিলিস দুটোই পাওয়া গেছে। তবে ১৮ স্থানে এডিস ও ১২ স্থানে এনোফিলিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া ১৫ স্থানে শতভাগ এডিস ও দুই স্থানে শতভাগ এনোফিলিস পাওয়া গেছে।

এদিকে সামপ্রতিক সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ার পর মশক নিধনে জুন মাসে দুই দফা ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করে চসিক। সর্বশেষ ২২ জুন শুরু হওয়া কর্মসূচিটির ১৫ দিন পেরিয়েছে। এরপরও মশা নিয়ন্ত্রণে না আসার অভিযোগ করেছেন নগরবাসী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএখন এডিস মশা কামড়ায় দিনে-রাতে সমানে
পরবর্তী নিবন্ধবান্দরবান ও রাঙামাটিসহ ১০ জেলায় নতুন ডিসি