শীত মৌসুমে শুষ্ক আবহাওয়ায় চারদিক থেকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাড়ছে অগ্নিঝুঁকিও। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে ৩টি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসন। তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সন্ধ্যা এবং রাতে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড হিসেবে না দেখে নাশকতা কিনা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, শীতের মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাড়ে। নানাস্থানে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানিসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদহানি হয়। প্রতিবছরই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অসতর্কতাসহ নানা কারণে বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে অফিস কিংবা কারখানা সর্বত্রই আগুন লাগে। আগুন লাগার ব্যাপারটি স্বাভাবিক হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্ন রেখে যায়। এমনি এক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে নগরীতে মাত্র তিন দিনে তিনটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়। এসব ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। ফায়ার সার্ভিস সময়মতো কাজ শুরু না করলে দুইটি ঘটনায় বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারতো বলেও সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।
ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ১২ নভেম্বর নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কর্ণফুলী মার্কেটের পাশের কাঁচা দোকানপাটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সংঘটিত এই অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের টিম প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন যেভাবে লেগেছিল তাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শংকা প্রকাশ করে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, আগুন ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের মার্কেট থেকে শুরু করে বহু স্থাপনাই পুড়ে ছাই হয়ে যেতো। ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট নিরন্তর চেষ্টা করে আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করেছে।
এর একদিন পরই গত ১৩ নভেম্বর নগরীর পাহাড়তলীর সাগরিকার জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের পাশে একটি ফোম কারখানায় আগুন লাগে। এতে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।
ফোম ফ্যাক্টরির চারপাশে আরো বহু ধরনের স্থাপনা রয়েছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ফায়ার সার্ভিস সময় মতো গিয়ে কাজ শুরু করতে না পারলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যেতো। আগুন ছড়িয়ে পড়লে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতো।
এর তিনদিন পর গত ১৬ নভেম্বর (শনিবার) গভীর রাতে নগরীর ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী রোডের জেলে পল্লীতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গভীর রাতে সংঘটিত এই ঘটনায় কয়েক কোটি টাকার জালসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। জাল রাখার ঘরসহ ৩৭টি ঘর পুরোপুরি পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি টিম দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন আয়ত্বে আনলেও পথে বসে গেছে অনেক মানুষ। এখানে একটি বন্ধ ঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শুষ্ক মৌসুমের স্বাভাবিক আগুন নাকি এর পেছনে কোনো নাশকতা রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ প্রশাসন। তারা শুরু করেছে অনুসন্ধান। একইসাথে ফায়ার সার্ভিসকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা কিছুটা চিন্তিত। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছি। পুলিশ বিষয়টি নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখছে।’ তিনি বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিসকেও বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে বলেছি। স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড হলে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা আহ্বান জানাবো। আর যদি কোনো নাশকতা থাকে তাহলে অবশ্যই দোষীদের আইনের মুখোমুখি করবো। বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ জানান।