নগরের সৌন্দর্য রক্ষায় আরো কঠোর হতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নগরের ৮০ শতাংশ কোচিং সেন্টার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কোনো অনুমতি ছাড়াই পোস্টারব্যানার লাগায় বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এতে নগরের সৌন্দর্যহানি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনুমতি না নেয়ায় সিটি কর্পোরেশন বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। অথচ একটি ব্যানারের জন্য মাত্র একদুই হাজার টাকা কর দিলেই যথেষ্ট। সেই অর্থ দিয়েই কর্পোরেশন শহরকে পরিষ্কার ও সবুজ রাখতে কাজ করে। এসময় ভবিষ্যতে অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের সাইনবোর্ড, পোস্টার ও ব্যানার টাঙ্গানো হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। চসিকের উদ্যোগে গত রোববার দুপুরে নগরের কাজীর দেউড়ি, চেরাগী পাহাড়, আন্দরকিল্লা, লালদীঘি, চকবাজারসহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, সাইনবোর্ড উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মেয়র। এ সময় দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা দিয়ে লাগানো নিজের ছবি সম্বলিত ব্যানারও নিজ হাতে উচ্ছেদ করেন তিনি। এসময় মেয়র বলেন, সপ্তাহ ব্যাপী কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। ৪১ ওয়ার্ডে যেখানে যেখানে অবৈধ ব্যানার লাগানো হয়েছে সব খুলে ফেলা হবে।

ডা. শাহাদাত বলেন, ক্লিন সিটি গড়তে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা চাই শহরকে সুন্দর রাখতে সবাই যেন সচেতন হয়। যারা অনুমতি ছাড়া ব্যানারুপোস্টার টানাচ্ছে, তারা যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেগুলো সরিয়ে ফেলে। ভবিষ্যতে অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের পোস্টার, ব্যানার বা সাইনবোর্ড টানানো হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, শহরের সৌন্দর্য রক্ষা করতে হলে নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমতি না নিয়ে কেউ যেন ব্যানারপোস্টার না লাগায়। যদি কেউ বিজ্ঞাপন দিতে চায়, তাহলে সেটা অনুমতি নিয়ে করবে। আমরা চাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার কিংবা ব্যক্তিগত ব্যবসা সবকিছুই আইনের আওতায় আসুক।

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন অনেক চেষ্টা করছেন নগরকে এগিয়ে নিতে। একটা শৃঙ্খলায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা দেখি তাঁর মধ্যে। কিন্তু তাঁর নির্দেশনা পুরোপুরি তাঁর অধীনস্থরা মানেন বলে মনে হয় না। পুরো শহর জুড়ে ময়লাআবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ডাস্টবিনগুলোতে উপচে পড়ছে আবর্জনা। কিন্তু নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। তিনি নির্দেশ দেন, কিন্তু নির্দেশ মানা হয় না। বলা যায়, অপরিণামদর্শী কিছু অমানুষের হাতেই চট্টগ্রামের সৌন্দর্য লুণ্ঠিত হয়েছে। দুর্বৃত্তরা পাহাড়, নদী, খাল গোগ্রাসে গিলে খেয়ে এই নগরীকে হতশ্রী করেছে। সৌন্দর্যবর্ধনের বেশকিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে, অনেকগুলো বাস্তবায়নের পথে। বলতে দ্বিধা নেই, এই নগরী তিলোত্তমা হবেএটা মেয়রের স্বপ্ন। কিন্তু তা বাস্তবে ধরা দেবে কখন।

মেয়র বলেন, আমি নিজেই প্রতি মাসে অন্তত একবার মাঠে নামি এই ধরনের অভিযান পরিচালনার জন্য। কারণ, এই শহর আমাদের নিজের শহর। যদি আমরা নিজের শহরের প্রতি দায়িত্বশীল হই, তাহলে কেউই শহরকে নোংরা রাখতে পারবে না। ব্যানারের কারণে কত সুন্দর দৃশ্য ঢেকে গেছে, সবুজ গাছপালা রাস্তার সৌন্দর্য। এসব সরানোর পরই বোঝা যায় শহর কত সুন্দর হতে পারে।

এখানেই সিটি মেয়রের সৎ উদ্দেশ্যের প্রমাণ মেলে। তবে তাঁকে কঠোর হতে হবে। বাংলাদেশে দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২নামে একটি চমৎকার আইন আছে। এটি ২০১২ সালের ১ নম্বর আইন; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, এই আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা খুবই কম। আইনের বাস্তবায়নের অভাবে শহরনগরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। যত্রতত্র যেমন পোস্টার লাগানো হচ্ছে, তেমনি দেওয়াল লিখনও চলছে সমানতালে। যারা ব্যক্তিগত দেওয়ালের মালিক তারা নিষেধাজ্ঞাসূচক ঘোষণা বা বিজ্ঞপ্তি লিখে রাখলেও তার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। উক্ত আইনের ৩ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে না। ধারা ৫ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে দেওয়াল লিখন বা ক্ষেত্রমতো পোস্টার মুছে ফেলা বা অপসারণ করা না হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্বউদ্যোগে অননুমোদিত যে কোনো দেওয়াল লিখন বা ক্ষেত্রমতো পোস্টার মুছে ফেলতে বা অপসারণ করতে পারবেন এবং উক্ত কার্যক্রমের আনুষঙ্গিক ব্যয়ের সমুদয় অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সুবিধাভোগীর নিকট থেকে নগদে আদায় করতে পারবেন। ৬ ধারা অনুযায়ী এর বিধান লঙ্ঘনের দায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্যূন ৫ হাজার টাকা এবং অনূর্ধ্ব ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে অনধিক ১৫ দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তারপরও এই আইন লঙ্ঘনের মানসিকতা বন্ধ হয়নি। আসলে নাগরিকদের সহযোগিতা ছাড়া নগর পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে