নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটছে পথচারীদের। শহরে গত সাত বছরে ৬৮৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৬৯ জন। এর মধ্যে ৩১৩ জনই পথচারী। যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২১ বছর থেকে ৪০ বছর বয়সীর সংখ্যা বেশি।
‘চট্টগ্রাম নগর সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন ২০২১–২০২৩’–এ এসব তথ্য উঠে আসে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) উদ্যোগে গতকাল রোববার টাইগারপাস নগর ভবনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে সহযোগিতা করেন ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) ও ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন নিরাপদ সড়ক চাই–এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আসফিকুজ্জামান আক্তার। প্রতিবেদনের তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাত বছরে নগরে সড়ক দুুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ৪০৯ জন। সামান্য আহত হয়েছেন ৫০ জন। সব মিলিয়ে হতাহত হয়েছেন ১ হাজার ২৮ জন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৭২ জনের। ২০২৩ সালে মারা যান ৯৬ জন। সড়কের পথচারীর পর বেশি ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেল, রিকশা ও অটোরিকশা আরোহীর।
সর্বশেষ ৩ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত তিন বছরে মৃত্যু হয়েছে ২৯৩ জনের। তাদের মধ্যে ১৭০ জন মারা গেছেন রাস্তা পারাপার ও হাঁটতে গিয়ে, যা মোট মৃত্যুর ৫৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল আরোহী মারা গেছেন ৪৫ জন। তিন বছরের ব্যবধানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে ৯০ শতাংশ। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পো দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। অন্যদের মৃত্যু হয়েছে রিকশা, মোটরচালিত রিকশা, ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ দুর্ঘটনায়।
অনুষ্ঠানে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নগরে সড়কে জেব্রা ক্রসিং, ফুটপাত, ওভারব্রিজ নির্মাণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আন্ডারপাস নির্মাণ করা যায় কিনা তা নিয়ে সমীক্ষা করা হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। তাদেরকে কীভাবে শৃঙ্খলায় আনা যায় তা নিয়ে করণীয় নির্ধারণে তাদেরকে নিয়ে বসা হবে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগের কথাও জানান তিনি।
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। নগরের সড়কগুলোতে এখন যেভাবে রিকশা, ইজি বাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশার পরিমাণ বাড়ছে, তাতে দুর্ঘটনা ও যানজট বাড়বে। এখনই যদি এই ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটপাত মুক্ত করার বিকল্প নেই। তিনি রিকশাচালকদের জন্য লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান।
ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কারিগরি পরামর্শক আমিনুল ইসলাম রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধে যানবাহনের গতিসীমা নির্দেশিকা বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে রোড ক্র্যাশের অন্যতম কারণ যানবাহনের অতিরিক্ত গতি। তাই বিআরটিএ ‘যানবাহনের গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪’ জারি করেছে। চসিক এই নির্দেশিকাটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সড়কগুলোকে নিরাপদ করে তুলতে পারে।
অনুষ্ঠানে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন বিআইজিআরএস চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী লাবিব তাজওয়ান উৎসব। স্বাগত বক্তব্য দেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাশেম। উপস্থিত ছিলেন সিএমপির উপ–পুলিশ কমিশনার মাহবুব, অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার কীর্তিমান চাকমা, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রামের উপ–পরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা, বিআইজিআরএস চট্টগ্রামের এনফোর্সমেন্ট কোঅর্ডিনেটর কাজী হেলাল উদ্দিন, ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেটর সুতপা তাসনিম, কমিউনিকেশন অফিসার মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।