নগরের পর্যটন স্পটগুলো সরগরম

চিড়িয়াখানায় রেকর্ড সংখ্যক দর্শনার্থী

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৭:২০ পূর্বাহ্ণ

বৃহস্পতিবার মহান বিজয় দিবস ও শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় লম্বা ছুটি কাটানোর সুযোগ হয়েছে চাকুরিজীবীদের। টানা ছুটিতে শুক্রবার বিকেলে পরিবার পরিজন নিয়ে নগরীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেছে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। রেকর্ড সংখ্যক দর্শনার্থী গিয়েছেন চিড়িয়াখানাতেও। পতেঙ্গা সৈকতে লোকজনের উপস্থিতি ছিল উপচেপড়া। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল হলেও কাজের সুবাদে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আরিয়ান আহমেদ। শুক্রবার বিকেলে পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছেন পতেঙ্গা সৈকতে। নির্মাণাধীন এবড়োথেবড়ো সড়কের কারণে প্রায় আধা কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছে সৈকতে। বিকেল সাড়ে তিনটায় কথা হলে তিনি বলেন, ‘পতেঙ্গা সৈকতে এখন হাজার হাজার মানুষ আসে। আগে একা আসলেও এবার দুই সন্তানকেও নিয়ে এসেছি। তবে রাস্তায় বিড়ম্বনার কমতি নেই। সিএনজি টেঙিগুলো মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। আউটার রিং রোডে আসার আরও আধা কিলোমিটার আগে গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছে। তাই ধুলোবালি মাড়িয়ে আধা কিলোমিটার হেঁটে সৈকতের মূল স্পটে আসতে হয়েছে।’
সৈকতে বেড়াতে আসা আলমগীর-মুনমুন দম্পতি বলেন, এখানে কঙবাজারের মতো বড় ঢেউ দেখা না গেলেও রাস্তার পাশে নির্মিত স্থাপনার উপরে দাঁড়িয়ে পুরো সাগরকে দেখা যায়। তাছাড়া সন্ধ্যার সময় বন্দরের জাহাজগুলোতে জ্বলে উঠা বাতিগুলো থেকে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে সাগরের পানিতে। আবার আকাশের চাঁদটা পূর্ণ হয়েছে। এতে সন্ধ্যার পর অসাধারণ দৃশ্য তৈরি হয়েছে।
আউটার রিং রোড ঘুরে দেখা গেছে, পতেঙ্গা মূল সৈকত বাদেও আউটার রিং রোডের ফৌজদারহাট প্রান্তের জেলে পাড়া বিচ পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জেলে পাড়া বিচ, দক্ষিণ কাট্টলী বিচ, চৌচালা বিচ, জালিয়া পাড়া বিচ, খেজুরতলা বিচ, সোনালী বিচ, গোল্ডেন বিচ, মুসলিমাবাদ বিচেও ভিড় ছিল পর্যটকের। তবে সড়কটিতে ভারী যানবাহন চলাচলের মধ্যেও প্রায় ৮-১০টি স্পটে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার করে পরিবার পরিজন নিয়ে গিয়েছেন সাগর সৈকতে। তাছাড়া বন্দরের টোল রোডের পাশে ব্যক্তি পর্যায়ে গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্ট কাম পর্যটন স্পটগুলোতেও ছিল লোকজনের সরব উপস্থিতি। তাছাড়া দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে সরগরম ছিল বিমানবন্দর রোডের বাটারফ্লাই পার্ক, কাজীর দেউড়িতে স্বাধীনতা পার্ক, ফয়’স লেকের সি ওয়ার্ল্ড, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের পাশে স্বাধীনতা পার্ক, আগ্রাবাদের কর্ণফুলী শিশুপার্কও। নামে শিশু পার্ক হলেও শিশুদের পাশাপাশি রাইডগুলোতে সমানতালে চড়েছে বড়রাও।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাতেও ছিল লোকজনের ভীড়। বিশেষ করে শিশু কিশোরের উপস্থিতি ছিল বেশি। চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা নাসিরাবাদ স্কুলের শিক্ষার্থী ফয়সাল বলেন, ‘গত দুই বছরে কোথাও বেড়াতে পারিনি। বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট হওয়ার পরও বাবা বাসা থেকে বের হতে দেয়নি। এখন বাবা আমাদের চিড়িয়াখানায় নিয়ে এসেছেন। এখানে সাদা বাঘ ও বাঘের ছানাগুলোকে বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে।’ ফটিকছড়ি থেকে কন্যা সন্তানকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন খায়েজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে পুরো বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গেছে। গত কয়েকমাস ধরে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। আমার মেয়ে ক্লাস ফোরে উঠেছে। তার আবদার রক্ষার জন্য চিড়িয়াখানায় এসেছি। চিড়িয়াখানার পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ দৈনিক আজাদীকে বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে শুক্রবার আমাদের চিড়িয়াখানায় রেকর্ডসংখ্যক দর্শনার্থী এসেছে। চিড়িয়াখানাকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হয়েছে। আগের চেয়ে প্রাণীর সংখ্যাও বেড়েছে। তাছাড়া একদিকে মহান বিজয় দিবস ও শুক্রবারের টানা ছুটির কারণে লোকজন বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভীড় করছে। শুক্রবার ১৩ হাজারের অধিক দর্শনার্থী এসেছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারত থেকে এল নিম্নমানের চাল
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হ্রাস পেয়েছে : যুক্তরাষ্ট্র