চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত নগর ও উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৪২ জন। এরমধ্যে উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২৭ জন এবং নগরীতে ১১৫ জন। এছাড়া মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৪২ জন লোহাগাড়ার বাসিন্দা। আর চলতি জুলাই মাসে মোট ৪৪ জনের মধ্যে ৩৬ জনই উপজেলা বাসিন্দা।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে নারী ও শিশুসহ ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া গত জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয় ৬৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫ জন, মার্চে ২৮ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে–তে ১৭ জন, জুনে ৪১ জন এবং জুলাইয়ের ৮ দিনে ৪৪ জন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া জানান, চলতি মাসে নগরী থেকে উপজেলায় আক্রান্তের হার প্রায় ৫ গুণ বেশি। যেহেতু এখন বৃষ্টির মৌসুম তাই সবাইকে একটু সতর্ক থাকতে হবে। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখাসহ কোথাও যাতে তিনদিনের বেশি পানি না জমে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু রোগীর মূল চিকিৎসা হচ্ছে ফ্লুইড ম্যানেজম্যান্ট। অনেক অনেক রোগী এনএসওয়ান রিপোর্ট হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এটির আসলে কোনো দরকার নেই। ডেঙ্গুর প্ল্যাটিলাট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন ইন্টারনাল ব্লিডিং শুরু হয়। তখন ক্রিটিকাল কেয়ার ম্যানেজম্যান্টের প্রয়োজন পড়ে। আবার প্ল্যাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর। তখন শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্ল্যাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আসলে প্ল্যাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে। কাজেই ডেঙ্গু জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার বংশ বিস্তার থামানো গেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এমনিতেই কমে যাবে। বিশেষ করে আমাদের চারপাশে যেসব জায়গায় এডিস মশা জন্মায় সেসব জায়গায় যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই বসতবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসা, ফুলের টব, ছাদবাগান ও ফ্রিজের নিচের ট্রেতে তিন দিনের বেশি পানি যাতে জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসাবাড়ি, ছাদ–আঙিনা নিজ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার রাখতে হবে। এটি সবার দায়িত্ব।
উল্লেখ্য, গত বছর নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ভর্তি হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৭ জন। এরমধ্যে মারা যায় ১০৭ জন। এছাড়া ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যান ৪১ জনের, ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় ২২১ জন এবং মারা যায় ৫ রোগী।