চট্টগ্রাম নগরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজ। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এ স্কুলটি নগরের ডবলমুরিং থানার অন্তর্গত আইস ফ্যাক্টরি রোডে অবস্থিত। বর্তমানে স্কুল এন্ড কলেজটিতে প্রায় ২ হাজার নয়শত শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে ২ হাজার দুইশ শিক্ষার্থী। বিপুল সংখ্যক এ শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে দুই তলাবিশিষ্ট একটি ভবন। ১০০ বছর আগে নির্মিত হওয়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এরমধ্যেই চলছে স্কুল শিক্ষার্থীেেদর পাঠদান কার্যক্রম। তবে দীর্ঘদিন পর স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ৬ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এটি নির্মাণ শেষ হলে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে আর পাঠদান করা লাগবে না বলে জানিয়েছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক রেহেনা আক্তার। তিনি বলেন, নতুন ভবন নির্মাণ হলে শ্রেণিকক্ষ সংকট আর থাকবে না।
জানা গেছে, কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে, প্রায় ৫ বছর পর কাজ শেষ হয়। এরপর ২০০৮ সাল থেকে কলেজ শাখা চালু হয় এবং সেখানে কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হয়।
কলেজিয়েট স্কুলের মতো নগরের আটটি সরকারি বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নতুন অবকাঠামো নির্মাণে মেগা প্রকল্পের আওতাভুক্ত হয়েছে এসব বিদ্যালয়। সবগুলো ভবনের টেন্ডার হয়ে গেছে। এরমধ্যে চারটি স্কুলের ভবনের কাজ চলছে বাকি চারটি স্কুলের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এসব স্কুলে জায়গা বুঝে পেলে কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন শিক্ষার গুণগত মানের জন্য পরিবেশ বা সুন্দর ভবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তা নিশ্চিত করা গেলে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি ভালো করতে পারে। তাই এই প্রকল্পের কাজ যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, ততই সবার জন্য মঙ্গল। আটটি বিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কলেজিয়েট স্কুল, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের দুটি ভবন হবে ১০ তলা, পাঁচটি ভবন হবে ৬ তলা এবং একটি ভবন হবে ৫ তলাবিশিষ্ট। আগামী দুই বছরের মধ্যে এই ভবনগুলো নির্মাণের কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যথাসময়ে জায়গা না পাওয়ায় ওই স্কুলের নতুন ভবনের বরাদ্দ বাতিল হয় বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আটটি বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ও সিটি গার্লস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। কলেজিয়েট স্কুলের ভবনের তৃতীয় তলার এবং সিটি গার্লস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদের কাজ চলছে। এছাড়া, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে, মুসলিম হাইস্কুলের পুরাতন ভবন ভেঙে নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। বাকি চারটি ভবন নির্মাণে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। জায়গা গ্রহণের কাজ চলছে। জায়গা বুঝে পেলেই কাজ শুরু হবে।
নগরের জামালখানে অবস্থিত ডা. খাস্তগীর উচ্চ বিদ্যালয়ের সরেজমিনে দেখা গেছে পুরাতন ভবন ভাঙার কাজ চলছে। পুরাতন ভবন ভেঙে সেই জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। একইভাবে নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণে জন্য জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এসব ভবন নির্মাণ হলে সরকারি স্কুলগুলোর শ্রেণিকক্ষের আসন সংকট অনেকাংশে কাটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দীর্ঘদিন স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছে বলে জানান কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেহেনা আক্তার। তিনি আজাদীকে বলেন, আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা যে ভবনে ক্লাস করে সেটি নির্মাণের প্রায় একশ বছরের বেশি সময় হয়েছে। ভবন সংকট থাকায় ঝুঁকি নিয়েই সেখানে ক্লাস করতে হয়েছে এতদিন। ২০০৩ সালে একটি ভবন কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মাণ শুরু হয়। স্কুলের শিক্ষার্থী অনেক বেশি আমাদের। তাদের জন্য ভালো ভবন ছিল না। নতুন ভবনটি নির্মাণ হলে আশা করি শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকবে না। খাস্তগীর স্কুলের এক শিক্ষক জানান, নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে শিক্ষার্থীরা আধুনিক সব সুযোগ–সুবিধা পাবে। ইন্ডোর গেইম, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, হল রুম ও লাইব্রেরিসহ সব সুযোগ–সুবিধা থাকবে। সরকারি বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের যে সংকট তাও দূর হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দশতলা ভবনে দুটি লিফট এবং দুটি সিঁড়িসহ প্রতিটি ভবনে টানা বারান্দা, ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট, সুপেয় পানি সরবরাহ, মেয়েদের জন্য পৃথক কমন রুম, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধাসহ স্মার্ট ক্লাসরুম থাকবে। তাছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হবে প্রকল্পভুক্ত সব স্কুলে।
এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী প্রকৌশলী খায়রুল হাসান খান আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে আটটি স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। চারটি স্কুলে সম্প্রতি টেন্ডার হয়েছে, সেগুলোর জায়গা বুঝে নেওয়ার কাজ চলছে। অনেক পুরাতন ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে নতুন ভবন করার জন্য। বাকি ভবনগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। ২৬ সালের মধ্যে কাজগুলো শেষ করার প্রাথমিক সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।