হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে চট্টগ্রামে তেমন প্রভাব পড়েনি। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছাড়া অন্য কোথাও হরতালের তেমন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। নগরীতে গাড়ি চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক। তুলনামূলক কম হলেও মহাসড়কে গাড়ি চলেছে। হেফাজতে ইসলামের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের মধ্যে বিভিন্ন সড়কের মোড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নগরীর কোথাও হেফাজতের নেতাকর্মীদের হরতালের সমর্থনে মিছিল-সমাবেশ করতে দেখা যায় নি। পিকেটিংও চোখে পড়েনি।
২০১৩ সালে হেফাজতের ডাকা হরতালে দিনভর নগরীর ওয়াসা মোড় দখল করে রেখেছিল সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ হয়েছিল। কিন্তু এবারের হরতালে ওয়াসা মোড় এলাকায় হেফাজত কর্মীদের দেখা যায়নি। একইভাবে হেফাজতের সম্ভাব্য বিক্ষোভের স্থান অক্সিজেন মোড়েও তাদের দেখা মেলেনি। সকালে নগরীর কাজীর দেউড়ি, ওয়াসা মোড়, টাইগার পাস, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন স্পটে ঘুরে দেখা যায়, রিকশা, অটোরিকশা, টেম্পু, হিউম্যান হলার, সিটিবাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল করছে। ব্যক্তিগত যানবাহন কম থাকায় রাস্তাঘাট কিছুটা ফাঁকা ছিল।
নগরীর দামপাড়ায় দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোর সামনে থেকে ঢাকার উদ্দেশে বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। আবার বাসের জন্য কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড়ও দেখা গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটি গেট দিয়ে পণ্য বোঝাই ট্রাক-লরি, কাভার্ড ভ্যান আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে। রাস্তায়ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলতে দেখা গেছে।
সকালে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট থেকে কৃষি ব্যাংকের হাটহাজারীর মদনহাট শাখার দ্বিতীয় কর্মকর্তা জয়া শর্ম্মা ভট্টাচার্য কর্মস্থলে যান। জানতে চাইলে কৃষি ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, রাস্তায় লোকাল বাস নেই। কিছু সিএনজি টেঙি ছাড়া আর কোনো গাড়ি দেখিনি। দোকানপাট বন্ধ। এলাকায় থমথমে অবস্থা দেখেছি। এখন সোয়া ১০টা। আমাদের দু’জন কর্মকর্তা গাড়ির অভাবে এখনও অফিসে আসতে পারেন নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে সিএনজি টেঙি ভাড়া করে এসেছি।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক আজাদীকে বলেন, ‘ছাত্ররা এখন মাদরাসার ভেতরে আছে। এখানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি আর রাঙামাটি সড়কে যানবাহন চলাচলে একটু সমস্যা আছে। কঙবাজার যাবার পথেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। না হলে পরিস্থিতি একেবারেই পিসফুল আছে।’
চট্টগ্রাম-কঙবাজার মহাসড়কে ছোট ছোট যানবাহন চললেও বড় গাড়ি তেমন চলছে না। শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে কঙবাজারের উদ্দেশে বড় যানবাহন তেমন ছাড়তে দেখা যায়নি। মহাসড়কের পথে পথে হেফাজত কর্মীদের যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি আর রাঙামাটি সড়কে বাস চলছে না। যেহেতু এসব গাড়ি হাটহাজারী হয়ে যেতে হয়, সেখানে অবরোধ আছে। কঙবাজারে গাড়ি যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে কাজ চলেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সকল প্রকার কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। সরকারি-বেসরকারি অফিস, কলকারখানা খোলা ছিল। তবে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নগরীতে হোটেল-রেস্টুরেন্ট ছাড়া অন্যান্য দোকান, মার্কেট-শপিংমল বন্ধ দেখা যায়, যেগুলো অন্যান্য দিনে এসময় খুলতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয় কাটিয়ে সড়কে জন-যান চলাচল বাড়তে দেখা যায় নগরীর সড়কগুলোতে।
এদিকে হরতালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বেলা সোয়া ১১ টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর আজাদীকে বলেন, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক আছে। গাড়ি তো চলছে। দোকানপাট প্রথমদিকে বন্ধ থাকলেও আস্তে আস্তে খুলছে। আমরা অতিরিক্ত পুলিশ রেখেছি। র্যাব আছে। বিজিবি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।
নগরীর কাজির দেউড়ির মোড়ে দায়িত্বরত নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমা আজাদীকে বলেন, ভোর সাড়ে চারটা থেকে আমরা মাঠে আছি। আমরা কোথাও অপ্রীতিকর কিছু পাইনি। যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। কেউ কোথাও বাধা পাবার কোনো অভিযোগ করেনি।
নগরীর কালুরঘাট বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে না জানিয়ে ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আমি দেওয়ানহাট মোড়ে অবস্থান করছি। সব কিছুই স্বাভাবিক আছে। এছাড়া নগরীর কোথাও পিকেটিং বা অপ্রীতিকর কিছুর খবর পাইনি।
তবে হরতালের বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতালে সমর্থন দিয়েছে। মহাসড়কে কোথাও গাড়ি চলছে না। ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজেরাই হরতাল সমর্থন করে মাঠে নেমে এসেছে। আমরা হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই। একইসঙ্গে সরকারের কাছে আমাদের দাবি হচ্ছে- হেফাজতের নিরীহ কর্মীদের গুলি করেছে যেসব পুলিশ অফিসার তাদের এবং হাটহাজারী থানার ওসিকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সকল শহীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা দিতে হবে। অন্যথায় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ থেকে ঢাকা, হাটহাজারী ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষে হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় সংগঠনটি। তাদের ডাকা হরতালে সমর্থন দিয়েছিল চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু ইসলামী দল।