করোনার টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগকে। চট্টগ্রাম মহানগরের সবকয়টি কেন্দ্রের বিপরীতে অনলাইন নিবন্ধন বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। প্রত্যাশিত নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ায় সিংহ ভাগ উপজেলার কেন্দ্রেও অনলাইন নিবন্ধনের সুযোগ মিলছে না। কেবল হাতে গোনা দুয়েকটি কেন্দ্রে গতকাল পর্যন্ত অনলাইন নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। গতকাল রাত বা আজ সকালের মধ্যে এসব কেন্দ্রেও নিবন্ধনের সুযোগ শেষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মোট কথা চট্টগ্রামে টিকা নিতে আগ্রহীরা বর্তমানে নতুন করে অনলাইন নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এ নিবন্ধন প্রক্রিয়া ফের চালু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
এদিকে প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের জন্য দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সংরক্ষণ না করে ধাপে ধাপে প্রাপ্ত সব টিকাই প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগে জানিয়েছিল- প্রথম ডোজ গ্রহণের ৪ সপ্তাহ পর টিকাগ্রহীতাকে দ্বিতীয় ডোজ প্রদান করা হবে। তবে জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শে করোনার টিকার ডোজের এ সময়সীমায় ফের পরিবর্তন আনা হয়েছে। ৪ সপ্তাহের পরিবর্তে প্রথম ডোজ গ্রহণের ৮ সপ্তাহ পর টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আগের নির্দেশনায় প্রাপ্ত মোট ডোজের অর্ধেক সংখ্যক মানুষকে টিকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় সিটিকর্পোরেশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটি। তবে নতুন সিদ্ধান্তে এ পরিকল্পনায়ও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন প্রাপ্ত সব ডোজের সমান সংখ্যক মানুষকে টিকা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
উল্লেখ্য, সবমিলিয়ে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ টিকা এসেছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৫ ডোজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাকি ৩ লাখ ১ হাজার ৯৫ ডোজ টিকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আগের নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রামে প্রাপ্ত ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজের অর্ধেক সংখ্যক (জন প্রতি ২ ডোজ হিসেব করে ২ লাখ ২৮ হাজার) মানুষকে টিকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে পরিকল্পনা মেনেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও টিকাদান কার্যক্রম চলছিল চট্টগ্রামে। তবে এখন নতুন সিদ্ধান্তের ফলে প্রাপ্ত ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজের সমান সংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া হবে চট্টগ্রামে। অর্থাৎ মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৪ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ প্রথম পর্যায়ের এ টিকা পাচ্ছেন। এর মধ্যে মহানগরে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৫ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে ৩ লাখ ১ হাজার ৯৫ জন মানুষ এ টিকা পাবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাদ্দ তালিকা অনুযায়ী- উপজেলাগুলোর মধ্যে আনোয়ারায় ১৫ হাজার ৫২৪ ডোজ, বাঁশখালীতে ২৫ হাজার ৮৪১ ডোজ, বোয়ালখালীতে ১৩ হাজার ৩৭২ ডোজ, চন্দনাইশে ১৩ হাজার ৯৬৫ ডোজ, ফটিকছড়িতে ৩১ হাজার ৫২৫ ডোজ, হাটহাজারীতে ২৫ হাজার ৮৭৬ ডোজ, লোহাগাড়ায় ১৬ হাজার ৭৭৬ ডোজ, মিরসরাইয়ে ২৩ হাজার ৮৯৬ ডোজ, পটিয়ায় ৩১ হাজার ৬৫১ ডোজ, রাঙ্গুনিয়ায় ২০ হাজার ৩১৭ ডোজ, রাউজানে ১৯ হাজার ৩৪৯ ডোজ, সন্দ্বীপে ১৬ হাজার ৬৯৭ ডোজ, সাতকানিয়ায় ২৩ হাজার ৬২ ডোজ এবং সীতাকুন্ডে ২৩ হাজার ২৪৪ ডোজ টিকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনার টিকা নিতে প্রথমে ৫৫ বা তদুর্ধ্ব বয়সীদের অনলাইন নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়। যার কারণে অগ্রাধিকার তালিকাভূক্তদের অনেকেও অনলাইন নিবন্ধন করতে পারেন নি। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বয়সের বাঁধা কমিয়ে চল্ল্লিশ বছর বয়সীদেরও টিকা নিতে অনলাইন নিবন্ধনের সুযোগ করে দেয়া হয়। এর ফলে ওই দিন (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকেই অনলাইন নিবন্ধনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে শুরু করে। অতিরিক্ত চাপে এক পর্যায়ে একটি একটি কেন্দ্রে নিবন্ধন ব্লক করে দেয়া হয়। বর্তমানে মহানগরের কোন কেন্দ্রে নতুন করে নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেনা আগ্রহীরা। শীঘ্রই এ নিবন্ধন প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হবে জানিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন- টিকার দ্বিতীয় চালান দেশে পৌঁছানোর পর ২৫/২৬ ফেব্রুয়ারির দিকে পুনরায় অনলাইন নিবন্ধন চালুর কথা ছিল। তবে এখন নতুন সিদ্ধান্তের কারণে তারও আগে এ নিবন্ধন চালু হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমাদের এরকম জানানো হয়েছে।












