নগরীতে এবার ২৭৬ মণ্ডপে হবে দুর্গা পূজা

ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু আগামীকাল

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১০ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান পূজা মণ্ডপ জেএম সেন হল প্রাঙ্গণসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৭৬টি পূজামণ্ডপে ১০ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৬দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব উদ্‌যাপনসহ ১১ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ। গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য।
লিখিত বক্তব্যে হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, চেতনা ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের ঐতিহ্যগত বন্ধনে আমরা আবদ্ধ। এ বন্ধন প্রকৃতির মতোই সত্য ও শাশ্বত। মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য যেকোন সময় চেষ্টা চালাতে পারে। এই ব্যাপারে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা বিগত দিনে সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের নিকট আবেদন জানিয়েছিলাম, যাতে সাম্প্রদায়িক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। তারপরও আমরা লক্ষ্য করছি দেশের কিছু কিছু স্থানে মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন স্থানে জবরদখল, মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরসহ ন্যাক্কারজনক ঘটনা এখনও ঘটছে। ১১ দফা দাবি গুলো হলো- ১) ৭২ এর সংবিধানের আলোকে সকল সম্প্রদায়ের সমঅধিকার নিশ্চিত করা। ২) হিন্দু সম্প্রদায়ের মঠ-মন্দি, ঘরবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুটপাট, হামলা ভাঙচুরসহ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের মানবতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শাস্তির ব্যবস্থা করা। ৩) দুর্গোৎসবকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান এবং শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৪দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা। ৪) প্রায় তিন কোটি সনাতনী সমাজের অন্যতম দুঃখ সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টিকারী বাতিলকৃত শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইন কার্যকর করে অবিলম্বে প্রকৃত ভূমি মালিকদের ফেরত দেওয়া। ৫) সকল সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের আনুপাতিক হারে নিয়োগ। ৬) সরকারি সংস্কৃত কলেজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন। ৭) বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের অবসান করা। ৮) চট্টগ্রামের তীর্থভূমি সীতাকুণ্ডকে জাতীয় তীর্থস্থান ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে জাতীয় মন্দির হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা করা। ৯) সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনীতি ও নির্বাচনে ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। ১০) সীতাকুণ্ডে শ্রীশ্রী ‘চন্দ্রনাথ ধাম’ ও কঙবাজার ‘আদিনাথ মন্দিরে’ সরকারি সহায়তায় উন্নয়ন করার আশু ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দেবোত্তর সম্পত্তি সংক্ষণ আইন দ্রুত প্রণয়ন করা। ১১) শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালীন সরকারি-বেসরকারি সকল প্রকার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি সাধন ধর, বিমল কান্তি দে, মুক্তিযোদ্ধা অরবিন্দ পাল অরুন, অ্যাড. চন্দন তালুকদার, সহ-সভাপতি অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জী, সুমন দেবনাথ, রত্নাকর দাশ টুনু, প্রদীপ শীল, বিপ্লব কুমার চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুন মল্লিক, সজল দত্ত, অ্যাড. নটু চৌধুরী, বিপ্লব সেন, অর্থ সম্পাদক সুকান্ত বিকাশ মহাজন, সাংগঠনিক সম্পাদক অঞ্জন দত্ত, সহ-দপ্তর সম্পাদক রিপন রায় চৌধুরী, সহ-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ সম্পাদক অমিত ঘোষ, কার্যকরি সদস্য রাহুল দত্ত, অয়ন ধর, নিঝুম পারিয়াল প্রমুখ।
দক্ষিণ জেলা পূজা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন : মেধস আশ্রমকে জাতীয় আশ্রম ঘোষণা ও সনাতনীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজায় চারদিনের সরকারি ছুটিসহ ১৫ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ। গতকাল শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সভাপতি ঝুন্টু চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের ৩২ দফা দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে শারদীয় দুর্গোৎসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদ্‌যাপন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা পূজা পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি শিল্পপতি বাবুল ঘোষ বাবুন, অ্যাড. কবিশেখর নাথ পিন্টু, জিতেন কান্তি গুহ, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রণব দাশগুপ্ত, তাপস কুমার দে, সদ্যবিদায়ী সাধারণ সম্পাদক পরিমল দেব। উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সহ-সভাপতি মাস্টার শ্যামল কান্তি দে, রতন বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি. ভবশংকর ধর, বিশ্বজিত দাশ, আশীষ মিত্র, ডা. আর.কে দাশ রুবেল, রুবেল শীল, রুবেল দত্ত, অ্যাড. বিবেকানন্দ চৌধুরী, নয়ন কুমার সিংহ, অলক কুমার দে, সাংবাদিক সান্টু দাশ, রাজু ধর রাজ, ইন্দ্রজিত দাশগুপ্ত, সনজিত চক্রবর্তী টিংকু, সাজিব চৌধুরী সাজু, প্রদীপ দেব প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালি চোখেই দেখা যাবে শুক্র বৃহস্পতি শনি
পরবর্তী নিবন্ধ‘বাঁচাও’ বাঁচাবে নারীকে