মানুষ যেখানে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার প্রয়াসে ব্যস্ত; ঠিক তখন এক শ্রেণীর মানুষ নিজেকে হত্যা করছেন প্রতিনিয়ত। সমাজে আত্মহত্যা যেকোনো ঘাতক ব্যাধি থেকে অধিক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং সমাজ তথা দেশকে সর্বক্ষণ ভীতির মুখে রাখছে। বর্তমানে যেকোনো বয়সের মানুষই আত্মহত্যা নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। প্রতিবছরই বাড়ছে আত্মহত্যার সংখ্যা। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম নগরীতে ৩৯৭টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২৬ জনে।
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনা সমাজকে নাড়া দিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকেও ভাবাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে কী করা যায় তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মোতাবেক পদক্ষেপ নিয়ে এগোচ্ছে পুলিশ। আশা করছি দ্রুত এর সুফল আসবে।
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। শুধু চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় গত বছর ৫২৬ জনের আত্মহত্যার ঘটনা রেকর্ড করা হয়। তাহলে রেকর্ডের বাইরেও নিশ্চয় রয়েছে। এ ছাড়া জেলায় কতগুলো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা শিউরে ওঠার মতো। তিনি বলেন, আত্মহত্যা যারা করেছে তারা নিশ্চয়ই বিস্বাদ থেকেই করেছে। এ বিস্বাদের পেছনে পারিবারিক বিরোধ, পড়ালেখার চাপ, মোবাইল কেনা, যৌতুক নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এসব সমস্যা দূর করার বিষয়ে আমরা কোনো কাজ করছি না। এ ক্ষেত্রে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইনি ব্যবস্থার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা কমে আসতে পারে।
সম্প্রতি অনেক কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যাকে ট্রেন্ড হিসেবে অনুসরণ করছে। মোবাইল ফোন অথবা শখের মোটর বাইক কিংবা অন্য কোনো শখের বস্তু কিনে না দেওয়ায়ও অনেক কিশোর বয়সীদের আত্মহত্যার খোঁজ পাওয়া যায়। এমনকি যেকোনো পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল করতে না পেরেও আত্মহত্যার ঘটনা চারপাশে অহরহ ঘটছে। আর মোটামুটি বয়স্ক মানুষও আত্মহত্যা করতে পিছপা হয় না। তাদের আত্মহত্যার কারণগুলো হয়ে থাকে ব্যক্তিগত জীবনে একাকীত্ব, পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি, ঋণগ্রস্ততা, পরিবারে অভাব মুছনে ব্যর্থতা ইত্যাদি। গত বছর চট্টগ্রামে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। প্রায় প্রতিদিনই চট্টগ্রামের কোথাও না কোথাও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না করার কারণে আত্মহত্যার ঘটনা সাধারণত ইউডি (আননেচারাল ডেথ বা অপমৃত্যু) হিসেবেই যবনিকাপাত ঘটে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে যদি আত্মহত্যার মামলাগুলো তদন্ত করা যায় তাহলে বেশির ভাগ আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের সনাক্ত করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম নগরীতে ২০২২ সালে ৫২৬ জনের আত্মহত্যার ঘটনা রেকর্ড করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সিএমপির তথ্যমতে, ২০২১ সালে চট্টগ্রামে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ৩৯৭টি। এর আগে আরও কম ছিল আত্মহত্যার ঘটনা। কিন্তু ২০২২ সালে সব রেকর্ড ভেঙেছে। সিএমপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে নগরীতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৬ জন, মার্চে ৫৬ জন, এপ্রিলে ৪৬ জন, মে মাসে ৫৪ জন, জুনে ৪৪ জন, জুলাইয়ে ৪৩ জন, আগস্টে ২৯ জন, সেপ্টেম্বরে ৩৮ জন, অক্টোবরে ৫৫ জন, নভেম্বরে ৫১ জন, ডিসেম্বরে ৪২ জন আত্মহত্যা করেছে। চট্টগ্রাম জেলায়ও আত্মহত্যার একের পর এক ঘটনা ঘটে গেলেও সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি জেলা পুলিশ।