নগরবাসী বসবাসোপযোগী চট্টগ্রাম দেখতে চায়

মোহাম্মদ মনজুরুল আলম | বৃহস্পতিবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী এলাকায় নালায় পড়ে এবার নিখোঁজ হয়েছেন কলেজ পড়ুয়া এক তরুণী। বাবা ও মামার সাথে হেঁটে যাওয়ার সময় নালায় পড়ে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম শহরে নালায় নিখোঁজ হওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। এর আগে ২৫ আগষ্ট’২১ নগরের মুরাদপুর এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় চশমা খালে পা পিছলে পড়ে যান এক ব্যক্তি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, অদ্যাবধি তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ বছর গত ৩০ জুন নগরের মেয়র গলি এলাকায় চশমা খালে পড়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক এবং যাত্রীর মৃত্যু হয়। চট্টগ্রামে এখন ১১ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলাকালে অনেকক্ষেত্রে প্রকল্প এলাকায় কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া হয় না, সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ নেয়া হয় না। দেয়া হয় না সতর্কতা মূলক নির্দেশনাও। আমাদের স্মৃতি থেকে এখনো বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ট্র্যাজেডির কথা মুছে যায় নি। চট্টগ্রামবাসীর জন্য অত্যন্ত দুঃখের এবং বেদনার বিষয় হচ্ছে ভারী বা মাঝারি বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে মেগা প্রকল্প চলমান এবং তা শেষ না হওয়ায় তার সুফল চট্টগ্রামবাসী অদ্যাবধি পচ্ছে না। তা কবে পাবে তার নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না কেউ।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও বৃষ্টির পানি অপসারণে চলমান সিডিএ’র প্রকল্পের খাল ও নালা-নালায় বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণের ফলে এবারের জলাবদ্ধতা সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছে। আবার সিডিএ বলছে চসিক নালা নর্দমার আবর্জনা এবং বর্জ্য সঠিক এবং যথাযথভাবে অপসারণ না করায় চট্টগ্রামে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতায় জলমগ্ন নগরে রাস্তা আর নালা-নর্দমা এবং খালের পানি একই উচ্চতায় থাকে বলে রাস্তা বা নালা-নর্দমা বা খাল খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। পাশাপাশি নালা-নর্দমাগুলোতে সীমানা প্রাচীর নেই। নেই নালার রেলিং। চলমান প্রকল্পগুলোতে নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী। নেই সতর্কতামূলক প্রচার প্রচারণা। চলাচলের জন্য বিপৎজ্জনক কোন চিহ্ন। তাই বর্ষায় চলাচলের সময় মানুষ রাস্তা আর নালা নর্দমার অবস্থান বুঝতে পারে না। ফলশ্রুতিতে নালা বা খালে পড়ে দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত দুর্ঘটনার পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। তথাপি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো এসব দুর্ঘটনার দায় বা দায়িত্ব স্বীকার না করে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা পাল্টা অভিযোগের আঙ্গুল তুলছে। পাশাপাশি যে কোনো দুঃখজনক মর্মান্তিক মর্মন্তুদ দুর্ঘটনা ঘটার পরে ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্টিং মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঝড় উঠে। পরবর্তী কালে আরেকটা দুর্ঘটনার পরে আগেরটা সবাই ভুলে যায়।
আমরা জানিনা এভাবে আর কত নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রাণ গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর বোধোদয় হবে। মানুষের চলাচল নিরাপদ হবে। নগরবাসী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জলজট যানজট মুক্ত সুন্দর সবুজ এবং বসবাসোপযোগী চট্টগ্রাম শহর দেখতে চায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধএকান্ত ভাবনা