নগরবাসী চায় বিশুদ্ধ পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ

| বুধবার , ৯ মার্চ, ২০২২ at ৭:২২ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার পর বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ওয়াসার পানি পরীক্ষা করতে প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ কমিটিকে পানি পরীক্ষা করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গত রোববার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ৭ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, আদালতে রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। তিনি জানান, ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিপক্ষ নম্বর এক তথা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরীক্ষা জন্য নিম্নলিখিত চার সদস্যের কমিটি গঠন পূর্বক পানির ২৪ পয়েন্ট থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। কমিটিতে থাকবেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের একজন শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরির একজন প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম বিভাগ পরিবেশ ল্যাবরেটরির একজন প্রতিনিধি।
এর আগে এ রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করার আদেশ দেন। পরে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
চারদিকে পানির অভাব না থাকলেও বিশুদ্ধ ও ব্যবহারোপযোগী পানির পরিমাণ বেশি নয়। অনেকের মতে, দিন দিন কমছে। তাঁরা মনে করেন, বিশ্বের এমন অনেক দেশ আছে যেখানে পানির সরবরাহ একেবারেই কম। পানি ছাড়া বিশেষ করে সুপেয় পানি ছাড়া জীবন অচল। দিনের শুরুটা হয় পানি দিয়েই। পানি ছাড়া জীবন অচল। এদিকে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বাড়ার কারণে জীবনের জন্য অপরিহার্য এই পদার্থের প্রাপ্তি নিয়ে কাড়াকাড়ি বাড়ছে আর ছড়িয়ে পড়ছে অসন্তোষ। গত শতকে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়েছে ছয়গুণ, আর পানির চাহিদা বেড়েছে তিনগুণ। বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি লোক নিরাপদ পানীয় জলের অভাবে আছে এবং ২৫০ কোটি লোক স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ধারণা করা হয়, এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ মারাত্মক পানির অভাবে ভুগবে। যতই সময় যাচ্ছে, স্বাদু পানির প্রাপ্তি ধীরে ধীরে খুব দুর্লভ হয়ে উঠছে। পানিসঙ্কটের মাত্রা যদিও অঞ্চলভেদে পৃথক, তবে দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে সমস্যাটি তীব্র ও তীব্রতর। ইউরোপীয় দেশগুলোতে সমস্যাটি এখনও ব্যবস্থাপনাযোগ্য সীমার বাইরে যায়নি বলে মনে করা হয়। ব্যবহার্য পানির এমন অভাব ঘটাতে পারে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা, ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে অর্থনীতি।
সুপেয় পানি প্রাপ্তির সুযোগ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘ পানি অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, ঢাকা শহরে পানি নিয়ে বস্তিবাসী বা নিম্নবিত্ত মানুষ যেমন বৈষম্যের শিকার, তেমনি গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে বৈষম্য বিদ্যমান। অন্যদিকে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার কারণে নিরাপদ পানির উৎস কমে যাচ্ছে, এর শিকারও হচ্ছে মূলত গরিব মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে পানির প্রাপ্যতা, প্রবেশগম্যতা, গুণগত মান ও পানি পাওয়ার আর্থিক সক্ষমতা অর্জন করা জরুরি। আমাদের হাতে সময় আছে মাত্র নয় বছর। এ সময়ের মধ্যে আরো ৪৪ শতাংশ মানুষের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। এ লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে বহুপক্ষীয় ও সময়োপযোগী দৃষ্টিভঙ্গিকে।
জীবন এবং স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ন্যূনতম মানের পানি সরবরাহ জনগণের প্রাপ্য। জনগণ নিরাপদ পানির অধিকারের ধারক। আবার রাষ্ট্র জনগণের জন্য নিরাপদ পানি এবং সুস্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে দায়বদ্ধ। তবু আমরা মনে করি, নিজের স্বাস্থ্য রক্ষার খাতিরে দূষিত পানি পান থেকে বিরত থাকা উচিত। পানির বিশুদ্ধতা কীভাবে রক্ষা করা যায়, সে-বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করা দরকার সকলের। এ ব্যাপারে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের করণীয় সবচেয়ে বেশি। সার্বিকভাবে এই শহরের পানি সঙ্কট ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। নগরীর পানি সমস্যা মোকাবেলায় চট্টগ্রাম ওয়াসা ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। তবু আমরা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিয়ে নিঃসন্দেহ হতে চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে