উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলা জরুরি। তা না হলে সব উন্নয়ন প্রকল্প ভেস্তে যাবে বলে আশংকা রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীদের ওপর খোদ মেয়রের আস্থা নেই। তিনি তাদের বিরুদ্ধে কাজে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। গত ২৬ মে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্ন বিভাগের অনেক কর্মীর বিরুদ্ধে দায়িত্বে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, অভিযোগ রয়েছে অনেকে সাইন করে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু কাজ করছেন না। এই ধরনের কাজে যারাই জড়িত থাকবেন, সেই ওয়ার্ডের সুপারভাইজারদের আমি দায়ী করব। সবাইকে কাজে লাগিয়ে শহরকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গত রোববার টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে পরিচ্ছন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও শহরকে পরিচ্ছন্ন করতে পরিচ্ছন্ন বিভাগকে আরো কার্যকর ও সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশ দেন মেয়র। তিনি বলেন, পরিচ্ছন্নতা হচ্ছে আমাদের মানুষের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটমেন্ট। এটি আমাদের প্রাইম দায়িত্ব। শহরকে ময়লা, দুর্গন্ধ ও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত রাখতে হলে পরিচ্ছন্ন বিভাগকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।
ডা. শাহাদাত বলেন, নগরের নালা ও খালগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও ম্যানহোলের ঢাকনা নেই, কোথাও স্ল্যাব মিসিং থাকার সমস্যা থাকলে তা দ্রুত সমাধান করতে হবে। এ সময় নগর ব্যবস্থাপনার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি এবং নালায় পলিথিন ফেলা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শহরকে নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। এটা আমাদের শহর, আমাদের দায়িত্ব। এই যাত্রায় সকল নাগরিককে পাশে চাই। বর্ষাকাল আসন্ন হওয়ায় এখন খাল সংস্কার নয়, খাল ও ড্রেন পরিষ্কারকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিচ্ছন্নতার বহু উপকারিতা আছে। বলা যায়, পরিচ্ছন্নতা স্বাস্থ্যবিধি চর্চার মূলনীতি। পরিচ্ছন্নতা শুধু অন্যের উপকার করে না, নিজেরও উপকার করে। শরীরের জীবাণু সংক্রমণ রোধ করে শারীরিক স্বাস্থ্যঝুঁকিকে কমিয়ে দেয়। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পরিচ্ছন্নতার প্রভাব আছে। পরিচ্ছন্নতা মনকে হালকা করে। মানসিক অবসাদ বিতাড়িত করে। মানসিক প্রশান্তি বয়ে আনে। নোংরা পরিবেশে যেখানে কাজ করতে দম বন্ধ হয়ে আসে সেখানে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কাজ করতে উৎসাহ জাগে। এই জন্যে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র অপরিচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা প্রয়োজন।
আমরা জানি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অনেকগুলো কাজের মধ্যে মূল দায়িত্ব তিনটি। রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামত, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা, শহর আলোকায়ন করা। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আয়ে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমসহ অন্যান্য অপরিহার্য সেবা শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাছাড়া ডাস্টবিন নির্মাণের জায়গা স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত ডাম্প ট্রাক, পরিচ্ছন্ন কর্মী স্বল্পতাসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে বর্তমানে চলমান পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম জনগণের প্রত্যাশা পূরণে শতভাগ সক্ষম হচ্ছে না। কয়েক বছর আগে বিলবোর্ড অপসারণ করে নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অভিনন্দন জানিয়েছিল নগরবাসী। কিন্তু এখন নগরী আবার পরিণত হয়েছে জঞ্জালে। এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অ্যাকশনে নামতে হবে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান অবৈধ সাইনবোর্ড ব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে এবং নগরীর সৌন্দর্যহানি করছে, অনতিবিলম্বে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। সাইনবোর্ড– বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলতে হবে। জনস্বার্থে একটা বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে এভাবে, সাত দিনের মধ্যে অবৈধ সাইনবোর্ড স্ব–উদ্যোগে সরিয়ে ফেলুন, নইলে সিটি কর্পোরেশন তা উচ্ছেদ করবে এবং জরিমানা প্রদান করবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এখন চলছে ক্রান্তিকাল। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত প্রচুর পরিশ্রম করছেন। কিন্তু নগরীর অপরিচ্ছন্ন রূপ তাঁকেও ব্যথিত করেছে। নগরের অপরিচ্ছন্ন চিত্র দেখলে কান্না আসে। দিনের পর দিন ডাস্টবিন থেকে ময়লা নিয়ে না যাওয়া একটা নিয়ম হয়ে পড়েছে। যেখানে–সেখানে, উন্মুক্ত স্থানে ময়লা–আবর্জনা, কফ, থুতু ও মলত্যাগে পরিবেশ দূষিত হয়ে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। নোংরা ও দূষণযুক্ত পরিবেশ রোগব্যাধির প্রধান কারণ। এ অবস্থায় নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় সিটি মেয়রকেই ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে হবে।