নগদ টাকা নিয়ে আলোচনায় সচিব

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ জুন, ২০২৩ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

পরীক্ষায় ব্যবহৃত ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) শিট সরবরাহকারী এক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শিক্ষাবোর্ড সচিবের নগদ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণের ঘটনায় আলোচনাসমালোচনা চলছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। গত বৃহস্পতিবার মাস্টার সিম্যাক্স নামে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন বিল বাবদ চেক নিতে আসলে শিক্ষাবোর্ড সচিব প্রফেসর রেজাউল করিম তাদের কাছ থেকে নগদে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির ট্রাক বোর্ডের নিচে ফ্লোর ক্ষতিগ্রস্ত করায় এর ক্ষতিপূরণ বাবদ এ টাকা নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন বোর্ড সচিব প্রফেসর রেজাউল করিম। আর টাকা গ্রহণের বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন সচিব।

তবে বোর্ড সংশ্লিষ্টদের দাবি, ফ্লোরের যে অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা মাস খানেক আগেই বোর্ডের নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে সংস্কার করা হয়েছে। এ কাজে বোর্ডের ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তাছাড়া ফ্লোর ক্ষতিগ্রস্তের ঘটনায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোনো রকম সিদ্ধান্ত বোর্ডে হয়নি। জানতে চাইলে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার আজাদীকে বলেন, এখানে সরকবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। আর ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কেও আমি অবগত ছিলাম না। টাকা নেয়ার পরে বিষয়টি আমি জেনেছি। তাও ওইদিন (বৃহস্পতিবার) অফিস সময়ের পর। এর আগে পর্যন্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে আমি জানতাম না। যেহেতু ক্ষতিপূরণ আদায়ের সিদ্ধান্ত ছিল না, সেহেতু তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের প্রশ্নও তো আসার কথা না।

সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লোর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি সত্য। তাই বোর্ডের চাওয়ার প্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তারা এ টাকা দিয়েছেন। আর এ টাকার জন্য বোর্ডের পক্ষ থেকে তাদের ট্রাক আটকে রাখার কথাও বলা হয়েছিল। বোর্ড থেকে জসিম নামের একজন কয়েক দফা ফোন করেন। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের লোকজন বোর্ডে গেলে বোর্ড সচিবও ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা পরিশোধের কথা বলেছেন। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. ইমরান দাবি করেন, যেহেতু বোর্ডের পক্ষ থেকে এ টাকা চাওয়া হচ্ছিল, তাই আমরা এ টাকা দিয়েছি। আমরা ধরেই নিয়েছিএটি নিশ্চয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত। টাকার পরিমাণও খুব বেশি না। তাই ক্ষতিপূরণ আদায়ে এটি বোর্ডের অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত ছিল কী না, সেটি আমরা আর যাচাই করিনি।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওএমআর শিট সরবরাহ বাবদ বোর্ডের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার একটি বিল পাওনা ছিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার ওই বিলের চেক নিতে বোর্ডে আসেন প্রতিষ্ঠানটির লোকজন। সংস্থাপন শাখা থেকেই এ চেক গ্রহণ করেন তারা। আর চেক দেয়ার সময় তাদের কাছ থেকে নগদে ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়।

তবে বোর্ডের স্বার্থে এ টাকা নেয়া হয়েছে দাবি করে সচিব রেজাউল করিম বলছেন, আগেও একটি প্রতিষ্ঠানের ট্রাক এরকম ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। তাদের কাছ থেকেও ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়। তবে বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা বলছেনআগে এরকম একটি ঘটনায় ওই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকেই সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের খরচে নিজেদের মতো করেই সেটি সংস্কার করে দেন।

এবার ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য সেকশান অফিসার জসিম (সংস্থাপন শাখার) দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল জানিয়ে বোর্ড সচিব বলেন, তিনি হজে যাওয়ায় তার হয়ে এ টাকা নিয়েছি। ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে বোর্ডের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল কী না, এমন প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি দাবি করেনবোর্ডের একজন কর্মচারী (জসিম) যেহেতু বিষয়টি ডিল করছিল, সেহেতু নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত ছিল। তবে চেয়ারম্যানসহ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছিল কী না, সে বিষয়ে তিনি সরাসরি জবাব দেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাজানো হচ্ছে নতুন কোচের রেক-কম্পোজিশন
পরবর্তী নিবন্ধসবার হবে স্বতন্ত্র আইডি