নখদর্পণে ছিল দিনলিপি, এক বছর ধরে চলছিল হত্যার ছক

কোনো শব্দ নেই, নেই হামলার বিশেষ কোনো চিহ্ন কোন অস্ত্রে জাওয়াহিরিকে মারল আমেরিকা?

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ৩ আগস্ট, ২০২২ at ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

লাদেনের সময় গোটা দুনিয়া জুড়ে আতঙ্কের অন্য নাম হয়ে দাঁড়িয়েছিল আল কায়দা। আমেরিকান নেভি সিল ২০১১ সালের ২ মে আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। এমন একটি সন্ধিক্ষণে আল কায়দার দায়িত্ব নেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। টুইন টাওয়ারে হামলার অন্যতম চক্রী জাওয়াহিরির মাথার দাম আড়াই কোটি ডলার ঘোষণা করেছিল আমেরিকা।

সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞদের মতে, লাদেন ছিলেন আল কায়দার মুখ। সংগঠনের ‘মেরুদণ্ড’ ছিলেন জাওয়াহিরি। আল কায়দা প্রধান সেই জাওয়াহিরিই নিহত হলেন লাদেন হত্যার ঠিক ১১ বছরের মাথায়। আফগানিস্তানের মাটিতে জাওয়াহিরির এই মৃত্যুকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অন্যতম সাফল্য হিসাবে দেখছে জো বাইডেনের সরকার।
আমেরিকার প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাওয়াহিরিকে হত্যা করার জন্য পরিকল্পনা বীজ বোনা হয়েছিল বছর খানেক আগে। আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর সময় থেকে তাকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু হয়। জাওয়াহিরির সঙ্গে আল কায়দার যে নেটওয়ার্কের সরাসরি যোগাযোগ ছিল তাদের উপর বছর খানেক আগে থেকেই নজরদারি শুরু হয়। ফলে জাওয়াহিরির অবস্থানও জানা যায়।

আমেরিকার গোয়েন্দারা জানতে পারেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি সেফ হাউসে রয়েছেন আল কায়দা প্রধান। জাওয়াহিরি কী করেন, কী খান, কোথায় যান- গত কয়েক মাস ধরে তার জীবনযাপনের উপর নজর রাখছিলেন আমেরিকার গোয়েন্দারা। এ নিয়ে ওয়াশিংটনের কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখতেন গোয়েন্দারা। গত ২৫ জুলাই জাওয়াহিরির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর অনুমোদন দেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তবে শর্ত দেওয়া হয়, ওই অভিযানের সময় যাতে কোনও সাধারণ মানুষের মৃত্যু না ঘটে। বৈঠকের ঠিক পঞ্চম দিনের মাথায় ৩০ জুলাই ভারতীয় সময় সকাল ৭টা বেজে ১৮ মিনিটে ড্রোনের মাধ্যমে কাবুলে অভিযান চালায় আমেরিকা। ওই অভিযানে অবশ্য আর কোনও ক্ষয়ক্ষতি ঘটেনি বলেই দাবি করেছে আমেরিকা। লাদেনের মৃত্যুর পর বেশ কিছু দিন চুপচাপ ছিল আল কায়দা। তার পর এক দিন আচমকাই প্রকাশ পায় জাওয়াহিরির ভিডিয়ো বার্তা। ‘রক্তের বদলা রক্ত’- এমনই হুঙ্কার দিয়েছিলেন আল কায়দা প্রধান। ৯/১১ হামলার মূলচক্রীর রক্ত ঝরিয়েই নাশকতার বদলা নিল আমেরিকা। জাওয়াহিরি নিহত হতেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের গর্বিত টুইট, ‘কত দেরি হল, সেটা বড় কথা নয়, কোথায় লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেছিল, তাতেও ফারাক পড়ে না। আমরা ঠিক খুঁজে বার করবই।

কোন অস্ত্রে মারল : কাবুলে আল কায়দা প্রধানের বাড়িতে হামলার কিছু ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, যে ঘরে আয়মান আল-জাওয়াহিরি ছিলেন, তার জানলা উড়ে গিয়েছে। কিন্তু বাকি সব ঘর, পারিপার্শ্বিক এলাকা- কোথাও হামলার কোনো চিহ্নই নেই! এই হামলায় কোনো শব্দ হয়নি। এমনকি, আল কায়দা প্রধান ছাড়া কারও গায়ে আঁচড়ও পড়েনি! কী এমন গোপন অস্ত্রে হত্যা করা হল তাকে?

আয়মান আল-জাওয়াহিরি হত্যায় ঠিক কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে, তা এখনও জানায়নি আমেরিকা। তবে বিস্ফোরণের প্রকৃতি ইঙ্গিত করছে, আল কায়দার শীর্ষনেতাকে হত্যা করতে ব্যবহার হয়েছে ‘ম্যাকাব্রে হেলফায়ার আরএনএঙ’। এই ‘ওয়ারহেড-লেস মিসাইল’-এর বৈশিষ্ট্য হল লক্ষ্যবস্তুকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। কিন্তু বিস্ফোরণ হবে না। কোনও শব্দ হবে না।

এ নিয়ে পেন্টাগন বা সিআইএ- কেউই প্রকাশ্যে কোনও বিবৃতি দেয়নি। তবে এর আগেও বেশ কয়েকজন চরমপন্থী নেতাকে এই একই অস্ত্রে হত্যা করেছে আমেরিকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকা এই বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যবহার হয় ২০১৭ সালে। সে বার আর এক আল কায়দা নেতাকে হত্যার ছক কষে আমেরিকা। সিরিয়ায় গাড়ি নিয়ে ঘুরছিলেন আল কায়দার অন্যতম শীর্ষনেতা আবু আল-খায়ের আল-মাসরি। কোনও শব্দ হল না। আচমকা গাড়ির ছাদ ফেটে মৃত্যু হল তার। সেটাও নাকি এই ‘ম্যাকাব্রে হেলফায়ার আরএনএঙ’-এর দৌলতে। আবু আল-খায়ের আল-মাসরির হত্যার বেশ কিছু ছবি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, গাড়ির ছাদে একটা বড় ফুটো। গাড়ির ভিতরের অংশ চূর্ণ-বিচূর্ণ। কিন্তু কী অদ্ভুত! গাড়ির সামনের এবং পিছনের অংশ একেবারে অক্ষত। আঘাতের লেশমাত্র চিহ্ন নেই। আমেরিকার এ বারের ‘মিশন’-এও সেই ড্রোনের মাধ্যমে ব্যবহার করা বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ‘নিনজা বোমা’-ই আমেরিকার পছন্দের অস্ত্র। লক্ষ্যবস্তু ছাড়া আঘাতের আঁচড় যাতে অন্য কোথাও না গিয়ে পড়ে, সেই কারণেই এই মারণাস্ত্রের ব্যবহার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাওয়াহিরির পর আল কায়দার মাথায় কি আরও এক মিশরীয়
পরবর্তী নিবন্ধধরা পড়ার আতঙ্কে রয়েছে দুর্নীতিবাজরা : চট্টগ্রামে দুদক কমিশনার