চোটের কারণে নেইমার দলে থাকবেন না, আগেই তা জানানো হয়েছিল। নেইমার ছাড়া সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিল দল কেমন ছন্দে থাকবে তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন সবাই। তার উপর ছিল ইতিহাস। ১৯৫০ এবং ২০১৮ বিশ্বকাপের দুই দেখায় ব্রাজিল–সুইজারল্যান্ড ম্যাচ ড্র হয়েছিল।
গতকাল দু’দলের প্রথমার্ধের খেলা গোলশূন্য ড্র হওয়ার পর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে বলেই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু না, কাতার বিশ্বকাপে এবারের ব্রাজিল ইতিহাসের ধারায় যায়নি। ১–০ গোলে সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়ে শেষ ষোল নিশ্চিত করে নিয়েছে তারা। খেলার ৮৩ মিনিটে দলকে গোল এনে দেন ক্যাসেমিরো।
তবে শুরুতে মাঠে যে শুধু দলের সেরা তারকা নেইমার ছিলেন না– তা নয়। দলের আরেক তারকা দানিলোও চোটের কারণে এই ম্যাচে ছিলেন না। দুই পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে ব্রাজিল। দলে আসেন মিলিতাও এবং ফ্রেড। তবে শুরু থেকেই আক্রমণ চালিয়ে গেলেও প্রথমার্ধে গোলের দেখা পাননি ভিনিসিয়াস–রিচার্লিসনরা। খেলার শুরু থেকেই ব্রাজিলের বিপক্ষে রক্ষণ সামলানোর দিকে মনোযোগ ছিল বেশি সুইজারল্যান্ডের। ফলে আক্রমণ করলেও তা কাজে লাগাতে পারছিল না ব্রাজিল। ম্যাচের ১৮ মিনিটের মাথায় সুযোগ নষ্ট করেন রিচার্লিসন। পাকুয়েতার ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। ২৭ মিনিটে বক্সের ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান রাফিনহা। বঙে অরক্ষিত ছিলেন ভিনিসিয়াস। সামনে ছিলেন শুধু গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। পায়ে বলে সংযোগ ভালো হয়নি ভিনিসিয়াসের। বল বাঁচিয়ে দেন সোমার। তখন খেলা চলছিল মূলত সুইজারল্যান্ডের ডি–বঙের আশেপাশে। বারবার আক্রমণে উঠেও সুইস রক্ষণ ভাঙতে পারেনি ব্রাজিল। ৩০ মিনিটে গোলমুখে শট নিয়েছিলেন রাফিনহা। বঙের বাইরে থেকে সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে চলে যায় বল। ৩৫ মিনিটের দিকে
খেলায় ফেরার চেষ্টা করে সুইজারল্যান্ড। ডান প্রান্ত ধরে আক্রমণ তুলে আনার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু ব্রাজিলের অর্ধে সুইস ফুটবলারের সংখ্যা কম থাকায় আক্রমণ তেমন জোরালো হয়নি। প্রথমার্ধের শেষের দিকে কর্নার থেকে সুযোগ পায় ব্রাজিল। রাফিনহার ক্রসে গোলের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, কিন্তু গোল আসেনি। প্রথমার্ধে গোলশূন্য অবস্থায় সাজঘরে যায় দু’দল।
বিরতিতে দলে পরিবর্তন আনেন ব্রাজিল কোচ তিতে। পাকুয়েতাকে তুলে নিয়ে রদ্রিগোকে নামানো হয়। আক্রমণে আরও গতি বাড়ানোর চেষ্টা করে যায় ব্রাজিল। কিন্তু সুইস রক্ষণভাগ যেন জমাট পাথর। ৫৬ মিনিটে আবারও আবার সুযোগ নষ্ট করেন রিচার্লিসন। বাঁ প্রান্ত ধরে বঙে ঢোকেন ভিনিসিয়াস। ডান পায়ের আউট স্টেপে বল রাখেন তিনি। রিচার্লিসন পা ঠেকাতে পারলেই গোল হতো। কিন্তু পারেননি তিনি। খেলার ৬৪ মিনিটে সুইজারল্যান্ডের জালে বল জড়িয়ে দেন ভিনিসিয়াস। বাম প্রান্ত দিয়ে ঢুকে পরাস্ত করেন সুইস কিপারকে। প্রথমে রেফারি গোল দিলেও পরে ভিএআর প্রযুক্তির সাহায্যে বাতিল করা হয় সেই গোল। আক্রমণ তৈরি করার সময় অফসাইডে ছিলেন রিচার্লিসন। সেই কারণে গোল বাতিল হয়ে যায়।
অবশেষে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে বহুকাঙ্ক্ষিত গোল আদায় করে ব্রাজিল। বাম প্রান্ত ধরে ভিনিসিয়াস–রদ্রিগো যুগলবন্দিতে বঙের মধ্যে বল পান ক্যাসেমিরো। ডান পায়ে জোরালো শট মারেন তিনি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মিডফিল্ডারের দারুণ এই ভলি জাল খুঁজে নেয়। ব্রাজিল এগিয়ে যায়। এই গোলেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তিতের শিষ্যরা। কিছু করার ছিল না গোলরক্ষক সোমারের। বাকি সময় আরও কয়েকটি আক্রমণ চালায় ব্রাজিল। তবে সেসব থেকে আর গোল হয়নি। গোলের দেখা না পাওয়ায় এক গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে সেলেসাওরা। নিজেদের পরবর্তী ও গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ২ ডিসেম্বর রাত ১টায় ক্যামেরুনের মুখোমুখি হবে ব্রাজিল।